ক্রিকেটবোদ্ধাদের অভিমত ছিল, শারজার উইকেটে জেতার জন্য ১৪০ রানই যথেষ্ট হতে পারে। সেখানে মোহাম্মদ নাঈম (৫২ বলে ৬২) ও মুশফিকুর রহিমের (৩৭ বলে ৫৭*) দুরন্ত ফিফটিতে চার উইকেটে ১৭১ রান তুলেও পারল না বাংলাদেশ। দুটি ক্যাচ মিসের চড়া মাশুল গুনে হার দিয়ে টি ২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু করলেন মাহমুদউল্লাহরা। রোববার শারজায় উপমহাদেশীয় ডার্বিতে সম্ভাবনা জাগিয়েও শ্রীলংকার কাছে পাঁচ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসার ঝড়ো ফিফটিতে সাত বল বাকি থাকতেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় লংকানরা। এ দুজনেরই সহজ ক্যাচ ছেড়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়েছেন লিটন দাস। ১৪ রানে জীবন পাওয়া রাজাপাকসা ৩১ বলে করেন ৫৩ রান। আসালাঙ্কা জীবন পান ৬৩ রানে। সমান পাঁচটি করে চার-ছক্কায় ৪৯ বলে ৮০* রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে তিনিই ম্যাচ বের করে নেন। পঞ্চম উইকেটে তাদের ৮৬ রানের জুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। লিটন ক্যাচ মিসের মহড়া না দিলে এই জুটি ভাঙত অনেক আগেই।
এবারের বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা নাসুম আহমেদ ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কুশাল পেরেরাকে। দ্বিতীয় উইকেটে পাথুম নিশানকাকে (২৪) নিয়ে ৬৯ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আসালাঙ্কা। নবম ওভারে নিশানকাকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙার পর অভিস্কা ফার্নান্ডোকেও ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদিকে (৩৯ উইকেট) ছাড়িয়ে টি ২০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ডটি এককভাবে নিজের করে নিলেন সাকিব (৪১ উইকেট)। তার জোড়া শিকারের পর দৃশ্যপটে হাজির মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দারুণ এক স্লোয়ারে তিনি ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক হাসারাঙ্গাকে। ৭৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া শ্রীলংকাকে আরও চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রাজাপাকসা ও আসালাঙ্কাকে জীবন দিয়ে জয়ের সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটান লিটন। ১৯তম ওভারের নাসুমের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে রাজাপাকসা ফিরলেও জিততে কোনো সমস্যা হয়নি শ্রীলংকার। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ২৭ অক্টোবর আবুধাবিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
কাল ম্যাচের প্রথমভাগে বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় লিটন দাসের (১৬)। মিড-অফে ক্যাচ নেন শানাকা। বোলার লাহিরু কুমারা। লিটনের উদ্দেশে বোলার কুমারা আপত্তিকর কিছু একটা বলার পর বাংলাদেশি ব্যাটার স্বভাবতই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এ সময় কুমারা ও লিটনকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। নাঈম সরিয়ে দেন কুমারাকে। দুই আম্পায়ারকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়। ভাগ্যিস, ঘটনা বেশিদূর গড়ায়নি। তবে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে কম কথা চালাচালি হয়নি। বেশিরভাগ নেটিজেন এই ঘটনার জন্য দোষারোপ করেছেন লংকান বোলার কুমারাকে।
সাকিবের লেগ স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে লংকানদের দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন করুনারত্নে। সাত বলে ১০ রান আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। সাকিব সাজঘরে ফেরার পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন নাঈম শেখ ও মুশফিকুর রহিম। ১৪তম ওভারে কুমারাকে চার মেরে ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাঈম। ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কুমারা। তার মাথার উপর দিয়ে বল দড়ির ওপারে পাঠান দারুণ ব্যাট করা নাঈম। লং-অনের ফিল্ডার চেষ্টা করেও বাউন্ডারি বাঁচাতে পারেননি। দুই বল পর মুশফিকের সঙ্গে তার ৫০ রানের জুটিও পূর্ণ হয় কুমারাকে চার মেরে। পরের ওভারের প্রথম দুই বলে মুশফিক পরপর দুটি চার মারেন হাসারাঙ্গাকে। দারুণ সুন্দর একটি ইনিংস খেলে নাঈম থামেন ৫২ বলে ৬২ রান করে। ছয় চারে সুশোভিত তার সময়োপযোগী ইনিংস শারজার দর্শকদের চিত্ত হরণ করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সোল্লাসে সমর্থন জুগিয়েছেন এই তরুণ বাংলাদেশি ব্যাটারকে। আক্রমণে ফেরা লংকান বোলার বিনুরা ফার্নান্ডোকে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন নাঈম। শর্ট মিডউইকেট অঞ্চলে ফিরতি ক্যাচ নিতে ভুল করেননি ফার্নান্ডো।
নাঈমের বিদায়ের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজে না এসে পাঠান আফিফ হোসেনকে। এর কিছুক্ষণ পর মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাত্র ৩২ বলে। তাকে ফর্মে ফিরতে দেখা বাংলাদেশের ভক্তদের জন্য স্বস্তির বৈকি। প্রস্তুতি ম্যাচ ও প্রথম রাউন্ডে রানে না-থাকা মুশফিক আন্তর্জাতিক টি ২০-তে ষষ্ঠ অর্ধশতরানের ইনিংস খেলে নিজেকে যেন ভারমুক্ত করলেন।
শ্রীলংকাকে সামনে পেলেই যেন হেসে ওঠে মুশফিকের ব্যাট। গত তিন বছরে আন্তর্জাতিক টি ২০-তে তাদের বিপক্ষে এ নিয়ে তৃতীয় ফিফটি পেলেন তিনি। বাংলাদেশকে ১৭০ পার করায় মুশফিকের দুরন্ত ইনিংস। ৩৭ বলে ৫৭ রানে (পাঁচ চার ও দুটি ছয়) অপরাজিত এই কিপার-ব্যাটার ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত তিনটি আন্তর্জাতিক টি ২০ ফিফটি (৪৪ বলে ৬৬, ৩৫ বলে ৭২ এবং ৩৭ বলে ৫৭) হাঁকালেন। তিনবারই অপরাজিত। শুধু দুবার (৩ বলে ৬ ও ২৫ বলে ২৮) কম রানে আউট হন তিনি।
এমন একটি মনে রাখার মতো ইনিংস খেলার পর মুশফিক বলেন, ‘ব্যাট করার জন্য এটা ভালো উইকেট। গত কয়েকটি ম্যাচে দেখা গেছে, খেলা যত গড়ায় ব্যাট করা তত কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমরা প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার মনে হয়, ১৭০ রান ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট।’