রুদ্রবার্তা২৪.নেট: করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কবি আমজাদ হোসেন। গত ১ আগস্ট হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কবি হিসেবে অধিক পরিচিতি থাকলেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন কিংবদন্তী নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের সাথে। থিয়েটারে অভিনয় করেছেন। সংগঠক হিসেবেও বেশ পরিচিতি ছিল সদালাপী আমজাদ হোসেনে। আমজাদ হোসেনের মৃত্যুতে তাঁর ছেলে সাংবাদিক আফজাল হোসেন পন্টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো।
“আমার বাবার মৃত্যুতে সকলের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে আমি আপ্লæত ও কৃতজ্ঞ।আমি আপনাদের সবার ভালোবাসার ঋণে ঋণী হয়ে গেলাম।ভালবাসার এই ঋণ যেন ভালবাসা দিয়েই শোধ করতে পারি আল্লাহ যেন সেই তৌফিক দেন।
আমার পিতা নির্লোভ, নির্বিবাদী, নিরহংকারী মানুষ ছিলেন। এটা তাকে যারা ৬০ বছর যাবৎ চেনেন তাদের স্বীকারোক্তি। ধনী পিতার সন্তান ছিলেন কিন্তু সম্পদের প্রতি ছিলেন আশ্চর্য রকমের নিরাসক্ত। শিল্প সাহিত্য আর বন্ধুদের নিয়ে কাটিয়েছেন জীবন। সেই শিল্প জগতের অর্জন নিয়েও ছিলেন নির্বিকার। অনেকেই জানেন না কিংবদন্তী নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন আমার বাবা (তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রে)। আব্বু যখন প্রথম হৃত্বিক ঘটকের সাথে দেখা করেন তখন ঋত্বিক বলেছিলেন, ‘তুমি তো কবি, সিনেমা করার কষ্ট কি তোমার সইবে?’
আব্বু সব কষ্ট সয়েছেন। এমনকি মৃত্যু শয্যায় থেকেও বলেছেন উনি ভাল আছেন। যেন তার কষ্টের কথায় তার সন্তানরা বিচলিত না হয়! নামকরা ব্যবসায়ী পিতার পুত্র হিসেবে সবার আশা ছিল উনি ব্যবসায়ী হবেন। অর্থ উপার্জন করবেন। কিন্তু অর্থ সম্পদ কোনদিন তাকে টানেনি। লক্ষ টাকার চেয়েও তার কাছে প্রার্থিত ছিল প্রিয় বোস কেবিনের এক কাপ চায়ের সাথে বন্ধুদের সাথে কাটানো কিছু সময়। সম্পদের প্রতি আব্বুর এই বিরল নির্মোহ অভিব্যক্তি হয়তো অনেককেই হতাশ করেছে। বিশেষ করে আমার দাদা চাইতেন তার পরে তার বড় সন্তান ব্যবসায়ের হাল ধরুক। অথচ সেই সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স করা আমার বাবা বেছে নিলেন পাঠাগার, বই আর শিল্পের জগতকে।
কিন্তু আব্বুকে নিয়ে আমার অহংকারের জায়গাটাও এটাই।কারণ সকল গাছ ফলবতী হয় না।কিছু গাছ শুধু ফুল ফোটায় আর সৌরভ বিলিয়ে যায় সকলের প্রতি।আমার আব্বু সৌরভ ছড়ানো এমনই ফুল ছিলেন। আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ্তায়ালা যেন সেই ফুলকে বেহেশতের বাগানে ঠাঁই দেন।”