রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ওএমএসের ৫ কেজি চাল-আটার জন্য সারা রাত অপেক্ষা

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩.২৯ এএম
  • ২২০ বার পড়া হয়েছে

পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম-পিএফডিএস এর আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি বিক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি হচ্ছে ওএমএস-এর আটা ও চাল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ওএমএস-এর পণ্য বিক্রি শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। প্রতিজনকে দেওয়া হয় ৫ কেজি আটা ও চাল। তবে সাধারণ মানুষ এসব পণ্য কিনতে আগের দিন বিকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা শুরু করছেন।

রোববার (২৫ ডিসেম্বর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আজাইপুর দক্ষিণপাড়া মহল্লার বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে মানুষের দীর্ঘ সাড়ি দেখা গেছে। সেখানে ২০০ জনকে পণ্য দেওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই ৫০০-৬০০ জনের লাইন তৈরি হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ ব্যক্তিরা বলছেন, সকাল তো দূরের কথা, আগের রাতেও আসতে দেরি হলে পরের দিন সকালে চাল-আটা পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই সারারাত জেগে অপেক্ষা করেন তারা।

লাইনে দাঁড়ানোর মধ্যে রয়েছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা আমেনা বেগম। তিনি ডায়াবেটিস, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত। চলাফেরা করাই তার জন্য অনেক কষ্টের। তবুও রোববার সন্ধ্যায় এসেছেন সোমবার সকালের আটা নিতে।

ঢাকা পোস্টকে আমেনা বলেছেন, ‘গত সপ্তাহে আটা দেয়ার আগের দিন রাত ১১টায় এসেছিলাম। এরপরও সকালে আটা পাইনি। তাই আজ মাগরিবের সময়ই চলে এসেছি।’

লাইনে দাঁড়ানো তরিকুল ইসলাম নামে অপর এক বৃদ্ধ বলেন, ‘মাগরিবের সময় এখানে এসেছি, কালকে সকালে চাল-আটা নেয়ার জন্য। অনেক ভীড়, তাই বাধ্য হয়েছি আগের রাতে লাইনে অপেক্ষার জন্য। মাত্র ২০০ জনকে দিবে, কিন্তু আগের দিন এশারের সময়ই এখানে প্রায় ৫০০-৬০০ লোক দাঁড়িয়ে আছে। আগেও এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘুরে যেতে হয়েছে।’

বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে আশরাফুল ইসলাম, রফিকুল আলমসহ কয়েকজন ব্যক্তি একটি করে চটের বস্তা নিয়ে এসেছেন রাতে শুয়ে থাকার জন্য। তারা জানান, লোকজনের যে চাপ তাতে সারারাত এখানে শুয়েই কাটাতে হবে। তাই বাসা থেকে চট নিয়ে এসেছেন। চাল-আটা দেয়ার আগেরদিন রাতে এখানে ঘুমিয়ে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেও জানান তারা।

আজাইপুর এলাকার পঞ্চাশোর্ধ মোজ্জাম্মেল হক, বিধবা শরিফা বেগম, আনারুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চাল-আটার দাম বাজারে অনেক বেশি। এখানে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা কেজি দরে পাওয়া যায়। তাই খেটে-খাওয়া কম আয়ের মানুষদের জন্য খুবই উপকারী এই উদ্যোগ। কম দামে চাল-আটা কিনতে বাধ্য হয়েই আমরা ভীড় করি। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী এর বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।’

চাল-আটা নিতে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন বলে জানান তারা।

তবে ওএমএস ডিলার শেখ মো. আখতার (চুনি) ঢাকা পোস্টকে জানান, অনেকেই এসব পণ্য কম দামে কিনে উচ্চদামে বিক্রি করে দেন। তিনি আরও জানান, অন্যান্য দিনে ভোর থেকে লাইন ধরলেও রোববার মানুষ আগেই এসে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেওয়া এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সম্প্রসারিত ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। কালকে সকালের চাল-আটা বিতরণের আগে আজকের এই শীতের রাতে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও চাহিদা অনুযায়ী আমাদের বরাদ্দ কম রয়েছে। তবে বরাদ্দ বাড়াতে ও এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খবর পাওয়ার পরই প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু এটি ওপেন মার্কেট সেল হিসেবে গণ্য, তাই এখানে একই ব্যক্তি একাধিকবার নিলেও তা প্রতিরোধ করা কষ্টসাধ্য। তবে একেক দিনে একেক এলাকার মানুষের জন্য এই সুবিধা করে দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় বা ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিদিন ৩০ টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছে ৭ হাজার ৬০০ পরিবার। জেলাজুড়ে মোট ১৯টি কেন্দ্রে চাল-আটা বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর পৌরসভায় ৬টি, শিবগঞ্জে ৪টি নাচোলে ৩টি ও ভোলাহাটে ২টি কেন্দ্রে এসব চাল-আটা বিক্রি করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort