বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩, ৪.৩১ এএম
  • ২০১ বার পড়া হয়েছে

আজ ১৭ রমজান। ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় একটি দিন। এ দিন ইসলাম ও মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঘুমিয়ে পড়া জীর্ণশীর্ণ মুসলমানকে জাগিয়ে দেওয়ার জন্য বদরের চেতনার চেয়ে কার্যকর আর কিছুই হতে পারে না।

Advertisement

বিশ্ব মুসলমানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ধনে-জনে, জ্ঞান-গরিমায় পিছয়ে নেই তারা। নবিজির (সা.) জামানায় না ছিল ধন, না ছিল জনবল, ছিল না কোনো ডক্টরেট-মাস্টার্স করা উচ্চশিক্ষিতের ছড়াছড়ি। আজ সে ইসলাম বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে অঢেল সম্পদ নিয়ে।

বোধহয় এখনকার কথা ভেবেই নবিজি খুব আফসোস করে বলেছেন, একদিন আমার উম্মত অনেক সম্পদের মালিক হবে। হায়! সেদিন তারা ইমানি সম্পদে জীর্ণশীর্ণ জাতিতে পরিণত হবে। দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১৭ তারিখ। বদরের মাঠে কাফেরবাহিনীর এক হাজার সশস্ত্র সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি মাত্র তিনশ তেরো জন মর্দে-মুমিনের ছোট্ট কাফেলা।

জাগতিক দৃষ্টিতে দেখলে যে কেউই যুদ্ধের আগে মুমিনবাহিনীর নিশ্চিত পরাজয়ের কথা বলে দিতে পারবে; কিন্তু এ বাহিনী তো জাগতিক দৃষ্টির বাইরেও আরেকটি দৃষ্টি অর্জন করেছিল। তা হলো ইমানি দৃষ্টি। জাগতিক অস্ত্র ছাড়ও ইমানি অস্ত্র তাদের কলবের খাপে মোড়া ছিল। তাইতো তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে, খেজুর গাছের শুকনো ঢাল হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে চকচকে তরবারিধারীদের ওপর।

বুখারি শরিফের কিতাবুল মাগাজিতে এসেছে, যেসব সাহাবি শুকনো খেজুরের ঢাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, একসময় তারা দেখে খেজুরের ঢাল আর খেজুরের ঢাল নেই। চকচকে তরবারি হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ। জাগতিক অস্ত্রের মোকাবিলায় ইমানি অস্ত্র এমনই হয়।

আরেকটি ঘটনা, নবিজি (সা.) সৈন্যবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আবেগময়ী ভাষণ দিচ্ছেন। একপর্যায়ে বলছেন, ওই জান্নাতের দিকে ছুটে আসো, যা আসমান ও জমিনের চেয়েও বড়। ন্যায়েরপক্ষে লড়াই করে শহিদ হলে এমন দশটি পৃথিবীর সমান একটি জান্নাত তোমাকে দেওয়া হবে। পাশেই একজন সাহাবি খেজুর খাচ্ছিলেন। যখন জান্নাতের কথা শুনলেন, তখন বললেন, বাহ! কী চমৎকার জান্নাত বানিয়ে রেখেছেন আল্লাহতায়ালা। আমি যদি হাতে থাকা খেজুরগুলো খেতে থাকি, তাহলে তো জান্নাতে যেতে খুব দেরি হয়ে যাবে। এ বলে হাতের সব খেজুর ছুড়ে ফেলে সে চলে যান ময়দানে।

জগতের মানুষ ভরসা করে জাগতিক উপকরণের ওপর। মুমিন ভরসা করে আল্লাহর ওপর। তাইতো রাসূল (সা.) যুদ্ধ শুরুর আগে আগে আকাশের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ, এত বিশাল সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করার শক্তি এ ছোট্ট মুমিন বাহিনীটির নেই। আজ যদি এ মুমিনবাহিনী হেরে যায়, তাহলে তোমাকে আল্লাহ বলে ডাকার আর কেউই থাকবে না। এভাবে দোয়া করে রাসূল (সা.) ঝাঁপিয়ে পড়লেন যুদ্ধের ময়দানে। আল্লাহর সাহায্য নাজিল হলো। বিশ্বাসীরা জয়ী হলো।

এই যে অস্ত্রের বলে নয়, দোয়ার ফলে বিজয় লাভ-এটাই বদরের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আফসোস! আজ মুসলমানের সব আছে, শুধু ইমানি শক্তিতে তারা হয়ে পড়েছে জীর্ণশীর্ণ। পৃথিবীর এখানে-ওখানে অন্যায়-অসত্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, মানবতার মুখে চুনকালি মেখে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোল চালানো হচ্ছে, হায়! মুসলমানদের সাহায্যে মুসলমান এগিয়ে আসছে না।

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মুহাম্মাদ বড় আফসোস করে বলেছেন, মুসলমানদের তো এমন শক্তি অর্জন করার কথা ছিল, বিশ্বের কোথাও মুসলমানের দিকে অন্যায়ভাবে কেউ চোখ তুলে তাকানো মাত্রই পুরোবিশ্বে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ঝড় ওঠবে-কেন আমার ভাইয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো হলো। অথচ পাখির মতো মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে, প্রতিরোধ তো দূরের কথা, মৌখিক নিন্দাও জানায় না মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশাহরা।

আর একশ্রেণির মুসলমান আছে, যারা বলে, বদরে রাসূল দোয়ার ফলে বিজয় হয়েছেন। আমরাও খানকা-মসিজদে বসে বসে তাসবিহ গুনে গুনে বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানের মুক্তি নিশ্চিত করব।

এদের সম্পর্কে মাহাথির মুহাম্মাদ বলেন, এমন মূর্খের মতো কোনো মুসলমান চিন্তা করতে পারে, তা ভাবতেও লজ্জা লাগে। তারা কি দেখে না নবিজি (সা.) দোয়া করে যেমন চোখ ভিজিয়েছেন, তেমনি যুদ্ধ করেও শরীর রাঙিয়েছেন। শুধু দোয়া করলেই যদি সব হতো, তাহলে বদরের ময়দানে ৭০ জন সাহাবির শহিদ হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। হে আল্লাহ! বদরের ইমান আবার মুসলমানদের মনে ঢেলে দিন। আবার অসত্যের বিরুদ্ধে মুসমানদের বিজয় দিন। আমিন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort