বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর বসন্ত মানেই বাহারি ফুলের সমাহার। এই ফুলের রাজ্য সাভারের বিরুলিয়া। গ্রামের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা পথের দুই পাশে গোলাপের বিস্তীর্ণ বাগান। এজন্য এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে গোলাপ গ্রাম। এই গ্রামে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ছয় কোটি টাকার গোলাপ বিক্রি হয়েছে।
চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাপ গ্রাম থেকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ কোটি টাকার গোলাপ বিক্রির টার্গেট ছিল। কিন্তু ছত্রাকের আক্রমণের কবলে পড়েছে গোলাপ বাগান। ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপ গাছের কলি, ডগা মরে ঝরে পড়েছে। কোনও কোনও গাছের পাতা ও কলির পাপড়ি কালো হয়ে ঝরে গেছে। এজন্য গোলাপ বিক্রির টার্গেট পূরণ হয়নি। তবু বাড়তি পরিচর্যা করে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন চাষিরা। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস রাঙাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
সাভারের বিরুলিয়া সড়ক দিয়ে কমলাপুর এলাকায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে গোলাপের বিস্তীর্ণ গ্রাম। ক্ষেতের আইল দিয়ে তাকালে যতদূর চোখ যাবে গোলাপে ঢাকা চারপাশ। অন্যরকম সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন বাগানে। কেউ দলবেঁধে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে। তবে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বেশি। কারও হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ, আবার কারও মাথায় গোলাপের মালা। দেখে মনে হচ্ছে গ্রামজুড়ে উৎসব চলছে।
গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সারি সারি ফুলের দোকান। এসব দোকানে ফুল দিয়ে মালা গাঁথার কাজ করছেন অনেকেই। দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করা হয় এসব মালা ও ফুল। ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে একেকটি গোলাপ।
ফুল চাষিদের সংগঠন সাভার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দিবসগুলো ঘিরে ১০ কোটি টাকার গোপাল বিক্রির টার্গেট ছিল। তবে সেই টার্গেট পূরণ হয়নি। এ পর্যন্ত ছয় কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি। তবে চলতি ও আগামী মাসে লক্ষ্য পূরণ হতে পারে।’
গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসা কলেজশিক্ষার্থী রায়হান বলেন, সোমবার ভালোবাসা দিবস। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে উত্তরা থেকে গোলাপ বাগানে এসেছি। একসঙ্গে এতগুলো গোলাপ বাগান দেখে আমরা মুগ্ধ। যাওয়ার সময় সবাই গোলাপ নিয়ে যাবো।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে গোলাপ বাগান দেখতে আসা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাসা সাভারেই। এর আগেও এখানে এসেছি। তবে আমার প্রিয়তমার বাড়ি ফরিদপুরে। গোলাপ গ্রামে সারি সারি ফুল দেখে উৎফুল্ল প্রিয়তমা। তাকে নিয়ে এমন সুন্দর জায়গায় ঘুরতে আসার অনুভূতি অন্যরকম। কয়েক ঘণ্টা ঘোরোঘুরির পর ফুল নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’
গোলাপ গ্রামের চাষি রুহুল আলম বলেন, ‘প্রতিবছর ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এখানকার গোলাপ ঢাকা ও আশপাশের এলাকার চাহিদা পূরণ করে। সাধারণ সময়ে গোলাপের দাম কম থাকলেও দিবসগুলোতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য এবার ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবস আমাদের লক্ষ্য ছিল। তবে ছত্রাকের আক্রমণে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তবু বসন্ত, ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা মেটানোর জন্য বাগানে বাড়তি পরিচর্যা করছি। এ পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করেছি।’
ফুল চাষি মনির হোসেন বলেন, ‘ঋণ নিয়ে গোলাপ বাগান করেছি। আশা ছিল ঋণ পরিশোধ করে বাড়তি আয় হবে। কিন্তু ছত্রাকের আক্রমণে গোলাপ গাছের কলি, ডগা মরে ঝরে পড়ায় সেই আশা পূরণ হলো না। এরপরও বাড়তি সময় দিয়ে যতটুকু সম্ভব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে গোলাপ প্রেমিদের চাহিদা মেটানোর জন্য বাগানে বাড়তি পরিচর্যা করে ফুল বিক্রির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাগান থেকে ছয় লাখ টাকার বেশি ফুল বিক্রি করার লক্ষ্য ছিল। ছত্রাকের আক্রমণে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত চার লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি।’
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, ‘অধিকাংশ চাষি বাগানে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করায় মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাশাপাশি এবছর আবহাওয়া খারাপের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হয়েছে। এসব কারণে গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আগাছামুক্ত করে গোলাপ গাছের মূলের মাটি আলাদা করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চাষিদের। সেই সঙ্গে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার কথাও বলেছি আমরা।’