মহান আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা তো আপনাকে মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)
নিজ উম্মতকে আল্লাহর রাসুল বিশেষ কিছু বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন এগুলোর কারণে মানুষ বেশি প্রতারিক হবে, তাই তিনি আগে থেকে আমাদের সতর্ক করেছেন।
দুনিয়ার ব্যাপারে সতর্কতা
রাসুল (সা.) আমাদের দুনিয়ার ধোঁকায় প্রতারিত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কাজেই পার্থিব জীবন যেন তোমাদের কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সে প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদের আল্লাহর ব্যাপারে প্রবঞ্চিত না করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৫)
শয়তানের ব্যাপারে সতর্কতা
যে শয়তান আদম (আ.) ও তার সন্তানাদির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে যে সে সব সময় আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করে যাবে। তাই প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের পর থেকেই শয়তান তার পেছনে লেগে থাকে। তাকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে থাকে। শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য রক্তের শিরায় ঢুকে পড়ে। এই শয়তানের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল আমাদের সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো শুধু তোমাদের নির্দেশ দেয় মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলার, যা তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮, ১৬৯)
মুমিনকে শয়তান যেসব বিষয়ে ধোঁকা দেয়
বিশ্বাসে ধোঁকা। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসে এবং সে বলে, এমন কে সৃষ্টি করেছে? তেমন কে সৃষ্টি করেছে? এক পর্যায়ে সে বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং সতর্ক হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস : ৩২৭৬)
নামাজে ধোঁকা। নামাজ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করার সর্বোত্তম মাধ্যম। শয়তান সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নামাজের মধ্যে ধোঁকা দিয়ে বান্দার নামাজ নষ্ট করার। উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান আমার নামাজ ও কিরাআতের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করে এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রাসুল (সা.) বলেন, এটা এক (প্রকারের) শয়তান। যার নাম ‘খিনজিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন (আউজুবিল্লাহ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে, তিনবার তোমার বাম পাশে থুথু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপর আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার থেকে তা দূর করে দিলেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৩১)
শয়তান কৌশলে পরিবার জীবন ব্যবস্থাপনায় ঢুকে পড়ে এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব বাধিয়ে দেয়। প্রিয় নবী এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ইবলিস (শয়তন) সমুদ্রের পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত, যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশি ফিতনায় নিপতিত করতে পারে।…রাসুল (সা.) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, এক দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। রাসুল (সা.) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে কাছে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছ। (মুসলিম,হাদিস : ২৮১৩)
কুপ্রবৃত্তির ব্যাপারে সতর্কবার্তা
অন্তরের রোগ মানুষের জন্য ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসে। এ জন্য আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষের নাফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়েই থাকে; কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ১২)
অনুপযুক্ত নেতৃত্বের ব্যাপারে সতর্কতা
সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কিছু মানুষকে নেতৃত্ব দিতে হবে—এটা সত্য। কিন্তু যারা এ পদের উপযুক্ত নয় বা এ পদের প্রতি লোভী, তাদের রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। এ দায়িত্ব যত মহান তার ভয়াবহতাও অনেক বেশি। এ পদ যেন কেউ মন থেকে প্রত্যাশা না করে—এটাই হবে একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিশ্চয়ই নেতৃত্বের লালসা করো, অথচ কিয়ামতের দিন তা লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৪৮)
জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্কতা
জাহান্নামের আগুন কত ভয়াবহ, তা যদি মানুষ জানত কখনো পাপাচারে লিপ্ত হতো না। এ জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একবার খুতবায় বলেছেন, দোজখের আগুন থেকে আমি তোমাদের সতর্ক করছি, দোজখের আগুন থেকে আমি তোমাদের সতর্ক করছি, দোজখের আগুন থেকে আমি তোমাদের সতর্ক করছি…। (দারেমি, হাদিস : ২৮১২)
আগের উম্মতের অনুকরণের ব্যাপারে সতর্কতা
আগের উম্মতের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা ও তাদের অনুসরণ করা মুসলমানদের অধঃপতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি বিচ্ছুর গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, এরা কি ইহুতি ও নাসারা? তিনি বলেন, আর কারা? (বুখারি, হাদিস : ৭৩২০)
এ ছাড়া রাসুল (সা.) আলেম-ওলামা ও বিচারকদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন।