চলছে মাহে রমজান। ঈদের এখনো প্রায় এক মাস বাকি। এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়ে গেছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচা। প্রতিদিনই ক্রেতাদের উপস্থিতি কখনো কম কখনো বেশী। সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করছে অধিকাংশ দোকানপাট গুলো। দোকানে দোকানে ঘুরে পছন্দের পোশাক কিনছেন অনেকে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরাও বাহারি পোশাকে দোকান সাজিয়েছেন।
এদিকে, গত দু-তিন বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে এবার ঈদ ঘিরে ব্যবসায় লাভের আশা ব্যবসায়ীদের। ভালো বিক্রির আশায় নতুন বিনিয়োগও করেছেন অনেকে। রমজানের শুরু থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের কিছুটা উপস্থিতির দেখা পেয়ে, এবার ব্যবসায়ীরা ঈদ নিয়ে আশাবাদি বলে জানিয়েছেন।
সরেজমিন চাষাঢ়া থেকে ডিআইটি বঙ্গবন্ধু সড়কের সাথে মার্কেট ও দোকানপাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকেই ব্যবসায় এক ধরনের মন্দা চলছে। ঈদের সময় ব্যবসার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাবে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় মানুষ তখন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। অনেকে ঈদের কেনাকাটাও করেননি। ব্যবসায়ীরাও দোকান খোলার খুব একটা সুযোগ পাননি। ২০২১ সালেও ব্যবসায়ীদের মন্দা কাটেনি। সে বছরও করোনার প্রকোপে ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটগুলোতে কোনো উত্তাপ ছিল না। অনেকটা ঘরবন্দি অবস্থায় ঈদ কেটেছে মানুষের। টানা দুই বছর ব্যবসায় লোকসান গুনে অনেকের পুঁজিতেও টান পড়ে।
ব্যবসায়ীরা জানান, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ব্যবসায় সুদিন ফেরেনি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মার্কেট, শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানপাট খোলা রাখার ক্ষেত্রে সরকার সময় বেঁধে দেয়। তার ওপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে জিনিসপত্রের। যা খুব দ্রুত অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে টানা তিন বছর বলতে গেলে লাভের মুখ দেখা হয়নি ব্যবসায়ীদের। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা মোটামুটি ভালো ছিল।
বঙ্গবন্ধু সড়কে সায়াম প্লাজায় ‘ওমেন কালেকশন’ দোকানে কাজ করেন মৌ রাণী দাস, তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, মাকের্টে টুকটাক ক্রেতারা আসা শুরু করেছে। প্রধম রোজা থেকে কখনো খুব বেশী ক্রেতা মিলে আবার কখনো একেবারেই থাকে না। সব মিলিয়ে ঈদের বেচাকেনার আমেজ আছে। আশা করি সামনের রোজা গুলোতে আরও ক্রেতা বাড়বে।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভাবে এখন অনেক জিনিস পত্রের দাম বেশী। অনেকটা অস্বাভাবিক দাম। এখন অব্দি লাভের আশা করছি না তেমন। বাকিটা উপর ওয়ালা জানে।
অন্যদিকে ক্রেতাদের অনেকে বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। পোশাক তৈরি ও আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এ কারণে দামও কিছুটা বাড়তি।
কালির বাজারের এক ব্যবসায়ী মো. হৃদয় শেখ বলেন, আমাদের সব থেকে ভালো ব্যবসা হয় রোজার ঈদে। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ব্যবসা খারাপ ছিল। ২০২২ সালে ব্যবসা ছিল মোটামুটি। এবার মনে হচ্ছে ব্যবসা ভালো হবে। সাধারণত ১০ রোজার পর থেকে ঈদের বিক্রি শুরু হলেও এবার রোজার শুরু থেকেই ক্রেতাদের টুকটাক সারা পাচ্ছি।
তিনি বলেন, মার্চ মাসটা শেষ হলে এপ্রিলের শুরু থেকে বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, মাসের শুরুতে চাকরিজীবীদের হাতে বেতনের টাকা চলে আসবে। অনেকে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাবেন। তারা একটু আগেভাগে কেনাকাটা শেষ করবেন। আমাদের ধারণা, এবার চাঁদরাত পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হবে।