জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক দুদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের জনগণের মধ্যেও সমস্যা আছে। জমির মালিক না হয়েও অনেকে ভুয়া কাগজপত্র করে জমির মালিক হয়ে যাচ্ছেন। এখানে সাধারণত বিভিন্ন জেলার মানুষ এসে জমি ক্রয় করেন। এদের অধিকাংশই সেই জমিটি বেশ কয়েক বছর খালি রাখেন। সেই খালি জমিটি তার অনুপস্থিতিতে দখল হয়ে যাচ্ছে।
এরকম অনেক জমি, টাকা উদ্ধারের কাজ প্রতিনিয়ত আমার করতে হচ্ছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন নিশ্চিন্তকরণসহ অনেক কাজ আমাদের করে যেতে হবে। দুদকের এই গণশুনানি চমৎকার একটি আয়োজন। দুদককে ধন্যবাদ জানাই নারায়ণগঞ্জ জেলায় এমন আয়োজনের জন্য। আমরা চাই যেন কোনো দুর্নীতি, ঘুষ যেন না থাকে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীর বাজারে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক আরও বলেন, দুর্নীতি এদেশে নতুন নয়। এটি অনেক পুরোনো। চাণক্যের অর্থশাস্ত্রে দুই হাজার বছর আগে বলা হয়েছে, এই ভূখণ্ডে ৪০ ধরনের দুর্নীতি হতে পারে। দুদকের আজকের আয়োজন সরকারি অফিসে সেবাপ্রার্থীরা কি ধরনের হয়রানি হচ্ছেন তা জানতে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ৫০ ভাগ সেবাও দিতে পারে তাহলে মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারে। তবে আমাদের কিছু সিস্টেমেটিক ত্রুটি আছে। আমার অফিসে প্রতিদিনই গণশুনানি হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি সেবাপ্রার্থীরা যান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে গণশুনানিতে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লি., তিতাস গ্যাস কোম্পানী লি., জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা সমবায় অধিদপ্তর, প্রাইমারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন।
তাদের অভিযোগসমূহ দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাগণ শুনেছেন এবং অভিযোগের সমাধান করার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন এবং অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তীতে কমিশন কর্তৃক যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গণশুনানিতে নারায়ণগঞ্জ এর ২৭টি সরকারি দপ্তর, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ মোট ৫১টি অভিযোগ উপস্থাপিত হয়। তন্মধ্যে ডিপিডিসি ৩টি, তিতাস ২টি, নির্বাচন অফিস ৬টি, জেলা সমবায়, ভূমি, হাসপাতাল, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, সরকারি সম্পদ দখলসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।
উপস্থাপিত অভিযোগসমূহের মধ্যে ৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, ৮টি অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করা হয়। এছাড়া ২১টি অভিযোগ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত গণশুনানিতে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের নাগরিকদের উপস্থিতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
গণশুনানিতে গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। এ
সময় আরও বক্তব্য রাখেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মোঃ আক্তার হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকার পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, নারায়ণগঞ্জ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাজহার হোসেন মাজুম।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্তাবধানে ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ’র উপ পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনীসহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।