নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডে রপ্তানিমুখি পোশাক কারখানা ইপিক গ্রুপের বার্ষিক বনভোজনের অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের দেয়া খাবার খেয়ে কয়েক শত শ্রমিক, কর্মচারী ও তাদের স্বজনবা অসুস্থ হয়ে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদের মধ্যে ৫০ এর অধিক শিশুও রয়েছে। বর্তমানে তারা আদমজীস্থ আলিফ জেনারেল হাসপাতাল, খানপুর ৩শ’ হাসপাতাল, সদর জেনারেল হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফ্যাক্টরির ভেতর অনুষ্ঠানটির আয়োজন হয়।
জানাগেছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ের একপর্যায়ে দুপুরে কারখানাটির পক্ষ থেকে উপস্থিত কর্মকর্তাসহ তাদের সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের খাবার দেয়া হয়। পরবর্তীতে খাবার খেয়ে বিকেল থেকে তারা অসুস্থ হয়ে বমি, পেট ব্যাথা ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হন। পরে দ্রুতই তাদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ইপিক-৪ প্রতিষ্ঠানের অপারেটর ঝুমা বলেন, আজকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বনভজন অনুষ্ঠান ছিল। দুপুর থেকে আমাদের খাবার দেয়া হয়। বাসায় এনে ওই খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর আমার শিশু পুত্র বমি করতে থেকে। কয়েকবার করার পর ছেলে আমার অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। শত শত শ্রমিক অসুস্থ হয়ে গেছে এই খাবার খেয়ে।
খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়া কামাল নামের একজন কোয়ালিটি অফিসার জানিয়েছেন, দুপুরের খাবার খাওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরই স্টেজের সামনে তিনবার বমি করেন। পরবর্তীতে তার সহকর্মীরা তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ইপিক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের এসিস্ট্যান্ট প্রডাকশন ম্যানেজার ইমরান হোসেন জানান, ঢাকার মোহাম্মদ পুর এলাকার এক খাবার ব্যবসায়ী খাবারগুলো সাপ্লাই করেছে। এই খাবার খেয়ে আমি এবং আমার ছেলেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসছি।
আজকের অনুষ্ঠানে ৯ থেকে ১০ হাজার শ্রমিক, কর্মচারি-কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে ৫০% অসুস্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা খাবার সাপ্লাই করেছে তাদের কোন ফল্ট থাকতে পারে।
স্থানীয় আলিফ জেনারেল হাসপাতালের ডিউটি ডা: তারিকুল ইসলাম জানান, ফুড প্রয়েজিং থেকে সমস্যাটা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদের এখানে একশ’জনের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ৮০ জনের মতো ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
ওদিকে নারায়ণগঞ্জ খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ৫৫ জন ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ৫৯ জন অসুস্থ শ্রমিককে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। ৩০০ শয্যা থেকে ৫ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইপিক গার্মেন্টস এর জিএম (মহাব্যবস্থাপক) মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকদের বিনোদন দিতে গত পনের বছর ধরে প্রতি বছর বাৎসরিক ইপিক উৎসব পালন করা হচ্ছে। শ্রমিকরা স্বপরিবারে এই উৎসব উপভোগ করে থাকে।
শ্রমিকদের জন্য ভালো খাবার, কনসার্ট ও খেলা সহ বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাদের বাৎসরিক কাজের মূল্যায়নস্বরূপ এ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়। শ্রমিক্রা সারাদিন উৎসবে মেতে দিনটা উপভোগ করে।
সকাল থেকেই শ্রমিকরা উৎসবে মেতে ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কনসার্ট উপভোগ করছিল। আজকে প্রতীক হাসান, কনা ও বিন্দু সহ ভালো শিল্পীকে আনা হয়েছিল। তাদের গানের সময় শ্রমিকরা খুব নাচানাচি হৈহুল্লোড় করে হিউজ পরিমান আনন্দ করেছিল। তখন ওইখানেই বেশ কয়েকজন বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সন্ধ্যা থেকে একে একে আরও বেশ কিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের আলিফ হাসপাতাল ও জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কেউই স্থায়ীভাবে ভর্তি ছিলো না। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে সাথে সাথে আবার ফিরে এসেছে।
আদমজী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মসিউদ্দিন মেজবাহ জানান, ইপিক গার্মেন্টের বাৎসরিক অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে দুপুরের খাবারের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। সন্ধ্যার পরে শ্রমিকরা অসুস্থ হতে থাকে। পরে তাদের কয়েকজনকে বেপজা হসপিটালে পাঠানো হয়। বাকিদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান জানান , ঘটনাটি শুনেছি। খাবার খেয়ে ওই গার্মেন্টের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।