ডিমের বাজারে চলমান অস্থিরতা কাটাতে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি দামে ডিম বিক্রির বিশেষ কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে ডিমের প্রধান দুটি পাইকারি বাজার তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে প্রতিদিন ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে শীর্ষস্থানীয় ডিম উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। এতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ঢাকায় এ কার্যক্রম শুরু করা হলেও সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান কাপ্তান বাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। তেজগাঁও বাজারে এ কার্যক্রম শুরু হবে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) থেকে।
বিপিআইসিসির যুগ্ম-আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কৃষি বিপণন অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা একত্রে বসে ডিমের যৌক্তিক উৎপাদন খরচসহ উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বন্যার কারণে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ জেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডিমের উৎপাদন কমে যায়, ফলে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, দেশের এ সংকটকালে একটি মহল অতিরিক্ত মুনাফা লোটার চেষ্টা করলে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। দেশ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে একাত্ম হয়ে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘বিপিআইসিসি’ আগামী ১৫ দিনের যে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তাতে খামার থেকে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা এক পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় পাওয়া যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা, ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারি ও পাইকারি আড়তদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ উদ্যোগকে সফল করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ উদ্যোগের আরেক সমন্বয়ক ‘ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, খামার থেকে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে সাত হাত বদল হয়। সম্প্রতি ডিমের দাম বাড়ার কারণে বেশ কিছু এলাকায় কিছু অপেশাদার লোকজনও ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। এতে হাত বদলের সংখ্যা আরও বেড়েছে। যত হাত বদল হবে, দাম ততই বাড়বে। তাই আমাদের মূললক্ষ্য হচ্ছে, হাত বদলের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহায়তায় আমরা সেই চেষ্টাই করছি।
বিপিআইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে এবং দুপুরে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে পৃথক দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সন্ধ্যায় বিপিআইসিসির উদ্যোগে ডিম উৎপাদনকারী বড় খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি অনলাইন সভা আহ্বান করা হয়। বুধবার বড় খামারি, তেজগাঁও এবং কাপ্তান বাজারের পাইকারি আড়তদারদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে ডিমের সরবরাহ ও বিপণন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। পরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজারে সরকারি দামে ডিম বিক্রির কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সময় স্বল্পতার কারণে তেজগাঁও পাইকারি বাজারে যথাসময়ে ডিমের চালান পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, তাই শুক্রবার থেকে তেজগাঁও বাজারের কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রমে ডিম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, কাজী ফার্মস, ডায়মন্ড এগস লিমিটেড, প্যারাগন পোল্ট্রি, পিপলস পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, নারিশ পোল্ট্রি, ভিআইপি শাহাদত পোল্ট্রি, নর্থ এগ লি., নাবিল এগ্রো, আর.আর.পি, রানা পোল্ট্রি, চাঁদ এগ্রো, কৃষিবিদ পোল্ট্রি, চিত্রা এগ্রো, আমান পোল্ট্রি এবং মেগা পোল্ট্রি। আশা করা হচ্ছে, আফিল এগ্রো এবং প্রাণ এগ্রোও এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবে।
১১ টাকার ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি, জরিমানা
লালমাটিয়া টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযানে ১১ টাকার ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি করায় একটি প্রতিষ্ঠানকে লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডলের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে দেখা যায়, পল্লবী থানার কালশী এলাকার লালমাটিয়া টেম্পু স্ট্যান্ডে অবস্থিত রিফাত এন্টারপ্রাইজ ডায়মন্ড এগ থেকে ১১ টাকা দরে ডিম ক্রয় করে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। এমনকি ডিম ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তারা ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করছে না এবং প্রতিষ্ঠানে কোনো মূল্য তালিকাও প্রদর্শন করা হয়নি। এসব অপরাধের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ভোক্তা অধিদফতর কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার মন্ডল।