রুদ্রবার্তা২৪.নেট: মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলী আহাম্মদ চুনকার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার। ১৯৮৪ সালে ২৫ ফেব্রæয়ারি ভোরবেলায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন। জনপ্রিয় এই রাজনীতিক ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার পরপর দু’বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নগরীর মাসদাইরে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে আলী আহাম্মদ চুনকার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে।
সকালে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তনের সামনে থেকে প্রভাত ফেরি শুরু করবে চুনকা ফাউন্ডেশন। পরে মাসদাইর কবরস্থানে আলী আহাম্মদ চুনকার সমাধিস্থলে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হবে। এরপর আলী আহাম্মদ চুনকার বাসভবন খানকায়ে দারুল ইস্কে মিলাদ ও দোয়া রয়েছে। সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন রেখেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এছাড়া কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদরাসা, হোসাইনিয়া মমতাজিয়া চুনকা সুন্নিয়া মাদরাসা ও বঙ্গসাথী কাবে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন থাকবে। প্রয়াত এই জননেতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের টানা তিনবার নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
১৯৩৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে আলী আহাম্মদ চুনকা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়াহেদ আলী, মাতার নাম গোলেনুর বেগম। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন আলী আহাম্মদ চুনকা। ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত এবং সংগঠিত করার কাজটিও করেন চুনকা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘদিন তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়। স্থানীয় সেনা ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন।
১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আলী আহাম্মদ চুনকা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৯ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য প্রার্থী হন। আলী আহাম্মদ চুনকা রাজনৈতিক পরিধির বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সবার কাছে ‘চুনকা ভাই’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই পরিচিতি তাকে জননেতার মর্যাদায় অসীন করে। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে কখনও কান্তি স্পর্শ করেনি তাকে। বিরামহীন এই পথ চলা তাকে কিংবদন্তীতূল্য জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তাঁর তিন কন্যার মধ্যে বড়জন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে টানা তৃতীয় মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আহাম্মদ আলী রেজা রিপন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি এবং ছোট ছেলে আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।