স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত দৈনিক মজুরী ভিত্তিক সকল কর্মচারীদের বেতন প্রদানসহ অন্যান্য ন্যায্য দাবী নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে হেনস্থার শিকার হয়েছেন কর্মচারীরা। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অসাদাচরন ও চাকুরীচ্যুত করার হুমকী। এতে ক্ষোভে ফুসে উঠেছে শ্রমিক কর্মচারীরা।
জানা যায়, বেতনের ভিত্তিতে অস্থায়ী কর্মচারীদের মধ্যে দুইটি ক্যাটাগরি রয়েছে তার মধ্যে একটিতে মাসিক বেতন ৮০০৮ টাকা এবং অন্যটিতে ১০০১০ টাকা এক্ষেত্রে প্রতি মাসের ২২ দিনের হাজিরা গননা করা হয়। কিন্তু বৈষম্যের শিকার কর্মচারীরা জানান বাংলাদেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে কাজ করছে এবং বহুদিন যাবত তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বি ত ও অবহেলিত। যেখানে ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের পূর্ণ মাসের ৩০ দিনের বেতন প্রদান করা হয়। সেখানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরা পায় মাত্র ২২ দিনের বেতন। অথচ ১২/১০/২০২০ তারিখের ০৭.০০.০০০০.১৭৩.৬৬.০৫৯.১৫(অংশ)-৯৩ নং স্মারক মুলে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক মজুরীর হার পূর্ণ নির্ধারণ করা হয়। যেখানে বিভাগীয় শহর এবং অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিয়মিত দক্ষ শ্রমিকদের মজুরী নির্ধারণ করা হয় ৬০০ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৪/০৫/২০১৬ তারিখে ০৭.০০.০০০০.১৭৩.৬৬.০৫৯.১৫-৩৪ নং স্মারক মুলে নিয়মিত দক্ষ শ্রমিকদের মজুরী ৫০০ টাকা করা হয়েছিল। অত্যান্ত দুঃখের সাথে কর্মচারীরা জানান দীর্ঘ কয়েক বৎসরে আমাদের বেতন থেকে অনেক টাকাই আত্মসাৎ করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তারা।
কর্মচারীরা আরো জানান, সকল প্রতিষ্ঠানেই কর্মচারীদের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এখানে মাসিক বেতন ব্যতীত প্রতিষ্ঠান হতে অন্য সকল সুযোগ-সুবিধা হতে বি ত। সেই আলোকে কর্মচারীরা কয়েকটি দাবী পেশ করেন। প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে বেতন নিশ্চিত করা। স্থায়ী কর্মচারীদের ন্যয় উৎসব ভাতা প্রদান করা, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উদ্যোগে অস্থায়ী কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা করা, কোন কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের জন্য এককালীন কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করা, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ঝুকি ভাতা চালু করার জোর দাবী জানান। এ ছাড়াও কর্মচারীদের পরিবহনজ সুবিধা কিংবা যাতায়াত ভাতা সহ কর্মচারীদের নৈমত্তিক মেডিকেল ছুটির ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন। প্রত্যেক অস্থায়ী কর্মচারীকে যোগদানের তারিখ উল্লেখ করে নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে বলেও শ্রমিকরা জানান। কোন কর্মচারীকে মৌখিকভাবে হঠাৎ করে চাকুরী থেকে বরখাস্ত বা চাকুরীচ্যুত করা যাবে না। কোন অপরাধ করলে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তির করা যেতে পারে। প্রত্যেকটি দাবীর মানবিক দিক বিবেচনা করে কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ও সহজতর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামানের কাছে স্মারক লিপি দিতে গেলে সিইও’র দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয় কর্মচারীরা। দেখা করতে চাইলে কর্মচারীদের আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে বলেন তোরা এখান থেকে চলে যা তা না হলে তোদের সকলকে চাকুরীচ্যুত করা হবে। তার এই ধরনের অসাদাচরন ও বৈষম্যের শিকার হওয়ায় কর্মচারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা পর প্রশাসকের সাথে দেখা করার সুযোগ পায়। এ সময় প্রশাসকের আন্তরিকতায় এবং মানবিকতায় সমস্যা সমাধানে এক মাসের সময় নিলে কর্মচারীরা তাদের দাবী প্রসঙ্গে আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু সিইও মোঃ জাকির হোসেনের অসাদাচরন এবং চাকুরীচ্যুত করার হুমকীতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কর্মচারীরা সাংবাদিকদের ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে এবং একজন সিইও হিসেবে কর্মচারীদের যে ধরণের আচার আচরণ ও ব্যবহার করা উচিত, ঠিক সেভাবেই তিনি কথা বলেছেন বলে জানান। তবে প্রায় সাড়ে চারশ কর্মচারীদের স্থায়ী করনের বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে করতে হয় বলেও তিনি জানান। কর্মচারীরা তাদের দাবী দাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য দাবী আদায়ে মাঠে নেমেছি, কোন হুমকী ধামকী পরোয়া করিনা। আমরা বৈষম্যের শিকার। আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা ও বেতন ভাতা চাই। প্রশাসক আমাদের সাথে ২/৩ মিনিট কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই।