শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় বাসা বের হয়েছিলো তিন কিশোরী

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২, ৩.৪০ এএম
  • ১৪৬ বার পড়া হয়েছে

ফতুল্লার দেলপাড়া থেকে অপহৃত হওয়া সহোদর বোন দুই কিশোরী শিশু আশা মনি(১৩) ও মিম(১১) কে চার দিনের মাথায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার(২২ জুলাই) রাতে ফতুল্লা- সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী জালকুড়ি সিনেমা হলের সামনের রাস্তা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে কিশোরীদের কে উদ্ধার করার পর তারা জানিয়েছে তাদেরক কেউ অপহরন করেনি তারা স্বেচ্ছায় একই বাড়ীর ভাড়াটিয়া অপর কিশোরী জান্নাতি(১৪)’র সাথে হরিপুর চলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলো।

যদিও দুই কিশোরী কে অপহরনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় অপর কিশোরী জান্নাতি কে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে পুলিশ আদালতে পাঠায়।

উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরী আশা মনি ও মিম জানায়, জান্নাতি ও তারা একই বাসায় পাশাপাশি ভাড়া থাকেন। তাদের বাবার নাম আলামিন। তার মার অনত্র বিয়ে করে সিলেটে বসবাস করছে এবং বাবা ও বিয়ে করে গ্রামের বাড়ী নেত্রোকোনার অতিতপুরে দাদা দাদীর সাথে থাকে। এখানে তারা তাদের ফুফুর সাথে থাকে। জান্নাতি ও তারা একই বাসায় পাশাপাশি ভাড়া থাকেন। তারা পেয়ারা বাগানস্থ একটি তুলার মিলে চাকুরি করে। অপরদিকে জান্নাতি তাদের কে জানায় যে রাসেল নামের এক ছেলের সাথে ভালবাাার সম্পর্ক রয়েছে। রাসেলের সাথে পালিয়ে যাবে। তারা ও জান্নাতির সাথে বাসা থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে মঙ্গলবার সকালে কাজে যাওয়ার নাম করে বাসা থেকে বের হয়। পরে রাস্তায় জান্নাতির সাথে মিলিত হয়ে তারা সাইনবোর্ড এলাকায় যায়। সেখান থেকে রাসেল কে নিয়ে তাদের হরিপুর যাওয়ার কথা ছিলো এবং সেখানে গিয়ে তারা দুই বোন রুম ভাড়া নিয়ে কোথাও কাজ করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলো। কিন্ত সাইনবোর্ড যাওয়ার পর তারা রাসেলের জন্য অপেক্ষা করছিলো।এমন সময় জান্নাতির বাবা, ভাই ও ভাবি ঘটনাস্থলে গিয়ে জান্নাতি কে নিয়ে আসতে চাইলে সে বাসায় না ফেরার জন্য চিৎকার চেচামেচি করে এক পর্যায়ে লোকজন জড়ো হলে তারা দুই বোন ভয়ে সেখান থেকে একটি গলি রাস্তায় ডুকে যায়। অনেকক্ষন হাটার পরে তাদের সাথে দেখা হয় তাদের সাথে এক সময় তুলার মিলে কাজ করা পূর্ব পরচিত ফয়সালের সাথে। তখন ফয়সাল তাদের কে এখানে আসার কারন জানতে চাইলে তারা জানায় বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে। তখন ফয়সাল নিজে অভিভাবক সেজে জালকুড়ি এলাকায় একটি রুম ভাড়া করে নেয়। পরে শুক্রবার রাতে পুলিশ ও তার ফুফু সেখান থেকে তাদের কে থানায় নিয়ে আসে। জান্নাতির প্রেমিক রাসেল কে তারা চিনে বা জানে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আশা মনি জানায়, জান্নাতি শুধু তার সাথে রাসেলের সাথে সম্পর্ক থাকার কথা শেয়ার করেছে।রাসেল কে তারা চিনে না। তারা কেনো বাসা থেকে বের হলো বা তার ফুফু তাদের কে নির্যাতন করতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন তাদের ফুফু তাদের কে কোন প্রকার নির্যাতন করতোনা। তারা এমনি এমনিই জান্নাতের সাথে কথা বলে পরিকল্পনা করে বের হয়েছিলো।

জান্নাতির বাবা আনোয়ার হোসেন জানায়,তাদের গ্রামের বাড়ী লালমনির হাট। গত দুই বছর পূর্বে ঠাকুরগাওয়ের বালওয়াডাঙ্গি মেয়ে কে নিয়ে গিয়েছিলো অন্য মানুষের ফসলি জমিতে কৃষি কাজ করার জন্য। সেখানে একটি ছেলের সাথে তার মেয়ের সম্পর্ক হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন বা জেনেছেন তবে নাম ঠিকানা কিছুই তিনি জানেন না। পরে তিনি জেনেছেন ছেলে ঢাকায় কোথাও যেনো কাজ করে।

জান্নাতের ভাবী তানিয়া জানায়, দুই বছর ঠাকুরগাওয়ে কৃষিকাজ শেষে জান্নাতি কে নিয়ে তার শ্বশুড় আনোয়ার ২০-২৫ দিন পূর্বে ছেলে বুলুর দেলপাড়াস্থ ভাড়া বাসায় আসে।এবং স্থানীয় এম,আলী টেক্সটাইল মিলস্ নামক কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করে। তার স্বামী ও একই কারখানায় কাজ করে।জান্নাতিও সেখানে যোগদান করেছিলো।দু-তিনদিন করার পর চাকুরী ছেড়ে দেয়।

উদ্ধার হওয়া দুই কিশোরীর ফুফু ও মামলার বাদী আলপনা জানায়, আশা মনি ও মিমের মা এবং বাবা উভয়েই বিয়ে করে পৃথক পৃথক ভাবে সংসার বেধেছে। তার দুই ভাতিজি তার নিকট থেকে তুলার মিলে চাকুরী করতো। মঙ্গলবার সকালে তারা কাজের জন্য বের হলেও জান্নাতির সাথে তারা সাইনবোর্ড এলাকা যায়। পরে জান্নাতি ফিরে এলে তাকে তার দুই ভাতিজির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নানা কথাবার্তা বললে বুধবার রাতে থানায় অভিযোগ দাযের করে। পরে পুলিশ জান্নাতি কে গ্রেফতার করে।এবং শুক্রবার রাতে আশামনি ও মিম কে পুলিশ তাদের সহায়তা নিয়ে জালকুড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

এ বিষয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন মোল্লা জানায়, প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ জুলাই মামলাটি রেকর্ড করার পর অভিযুক্ত কিশোরী জান্নাতি কে গ্রেফতার করা হয়, পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ”পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দুই কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ করা হলেও আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে অপহরণ বলে মনে হচ্ছে না। ওই দুই কিশোরীকে শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জালকুড়ি সিনেমা হলের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া উদ্ধার হওয়া কিশোরীরাও আমাদের জানিয়েছে, যে তারা জান্নাতির সাথে স্বেচ্ছায় বাসা থেকে গিয়েছিলো। কিশোরী দুজনকে উদ্ধারের পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে, আদালতে তাদের দেয়া জবানবন্দির উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort