সোনারগাঁও পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় পুকুরে গাড়ি ফেলে দিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় পলাতক সেই আসামি আলমগীর হোসেনকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বদিউজ্জামানের আদালতে মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানী শেষে আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরআগে বুধবার তাকে চট্টগ্রামের লোহাগড়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, আসামিকে চট্টগ্রামের লোহাগড়া থেকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আসামি আলমগীরকে দিয়ে গাড়ি চালানোর এক পর্যায়ে সে কৌশলে গাড়ি খাদে ফেলে নিজে পালিয়ে যায়। এতে সোনারগাঁও থানার দুই এসআইয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার মুনসুরাবাদ গ্রামের কাজী নুরুল ইসলামের ছেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এসএম শরীফুল ইসলাম।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, গোপন সূত্রে খবর ছিল টেকনাফ থেকে ৫০ হাজার ইয়াবার একটি চালান আসছে, খবর পেয়ে সোনারগাঁয়ের মেঘনা টোলপ্লাজায় তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এ সময় আসামির গাড়িকে সিগন্যাল দিলে এক কনস্টেবলকে আহত করে দ্রæত সেটি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের আরেকটি টিম মোগড়াপাড়া এলাকায় ধাওয়া করে আসামি আলমগীর হোসেনকে গাড়িসহ এবং ৪২ হাজার ইয়াবা বড়িসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারের পর আসামিকে নিয়ে তারা সরাসরি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে চলে আসে। এ সময় আসামিই গাড়ি চালায়। এসপি অফিসে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর এবার থানার ফেরার পথে আসামিকে নিয়ে থানায় রওয়ানা দেন দুই এসআই ও এক এএসআই। তবে, তাদের তিনজনের কেউই গাড়ি চালাতে পারেন না ফলে আসামিকে দিয়েই গাড়ি চালানো হয়। আসামি গাড়ি চালিয়ে সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া এলাকায় এলে তিনি গাড়ি থেকে কৌশলে লাফিয়ে পড়ে গাড়ি খাদে ফেলে দেয়। এতে দুই এসআই মারা যান ও এএসআই গুরুতর আহত হন। এসময় আসামি পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী টমটম চালক মোক্তার হোসেন জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দত্তপাড়া বাদশা গ্যারেজের একটু সামনে একটি প্রাইভেটকার দ্রæতগতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। গাড়িটি মহাসড়ক থেকে সোনারগাঁ থানার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটি পুকুরে মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ও সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুকুর থেকে পুলিশের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আমার টমটম দিয়েই নিয়ে আসি। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
আসামী দিয়ে গাড়ি চালানো ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে। ঘটনা তদন্তে ২০ জানুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গঠিত তদন্ত কমিটিতে সভাপতি করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে। আরো দুই সদস্য হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার খ-জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শাহরিয়ার হাসান, নারায়ণগঞ্জ ডিএসবি শাখার ডিআইও-২ মো. হুমায়ুন কবির খান। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসে অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ একটি বস্তুনিষ্ট প্রতিবেদন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের নিকট দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।