টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্রায় দেড় মাস আগে লক্ষ্মীপুরে বন্যা দেখা দেয়। এখনও জেলার পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কারণ হিসেবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, বন্যার পানি ভুলুয়া নদীসহ খাল ও নালা দিয়ে নিষ্কাশন হতো। তবে খাল দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও দখলমুক্ত না করায় পানি নামতে পারছে না। এ কারণে এখনও সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। কিছু স্থানে ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারেনি। এ অবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা যায়নি।
রামগতি-কমলনগর নদীভাঙন প্রতিরোধ আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান জানান, ভুলুয়া নদীসহ অধিকাংশ খাল ও নালা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও দখলমুক্ত না করায় পানি নামতে পারছে না। ফলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ৭৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি বিদ্যালয় এখনও পানিবন্দি। ৮৯টিতে বন্যাকবলিত মানুষ বসবাস করছে। বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ, পাশর্^বর্তী রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় জেলার অর্ধেকেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা যায়নি। কবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি চালু করা যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার।
লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনূস মিয়া জানান, বন্যার পানি কমলেও পরবর্তী বৃষ্টিপাতের কারণে পানি আবার বেড়েছে। বর্তমানে ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এখনও ৫ হাজার ৩০০ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারীদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও কমলনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ এখনও পানিবন্দি। পানি ধীরে নামার কারণে বন্যা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মোহাম্মদ আলী আকবর জানান, তিনি পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। তবে শুক্র ও শনিবারের বৃষ্টিতে আবারও তার ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। পরে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তার মতো আরও কয়েকজন আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে এসেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার সময়ের আলো বলেন, ‘জেলায় এখনও ৩০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি। মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতির প্রতিবেদন চেয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পানিবন্দিদের ত্রাণসহ বিভিন্ন সহায়তায় মাঠ পর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।’
রাঙামাটিতে ৩১ গ্রাম বন্যাকবলিত : হ্রদবেষ্টিত পাহাড়ি কন্যা রাঙামাটিতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার বাঘাইছড়ি উপজেলা ৩১টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে লংগদু, কাউখালী, বিলাইছড়ি, বরকল নানিয়ারচর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে। জেলার ২১টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাঘাইছড়ি উপজেলা ৩১টি গ্রাম বন্যায় ভাসছে। উপজেলার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৭০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে। ১৪ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। কাউখালী উপজেলার মাতামুহুরীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর ১০৪ এমএসএলে এসে ঠেকেছে। এ হ্রদের ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। রুল কার্ভ অনুযায়ী হ্রদে পানির স্তর ১০৭-৮ এমএসএল হলেই পানি বিদ্যুৎ বাঁধ রক্ষায় ১৬ স্পিলওয়ে খুলে দিতে হবে। অথচ বুধবার বিকাল পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে ১০১ এমএসএল ছিল পানির স্তর। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত মাত্র এক দিনেই পানির স্তর ৩ এমএসএল বেড়ে গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও তার পানি ছাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি।
টানা ভারী বর্ষণে জেলার ২১ স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া কলাবাগান এলাকায় পাহাড় ধসের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পাহাড় ধসের মাটি সরাতে মাঠে নেমেছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঠান্ডাছড়ি ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়িতে সড়ক ডুবে গেছে।
খাগড়াছড়ির বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক টিম কাজ করছে।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস বলেন, বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কলাবাগান এলাকার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সড়ক বিভাগের লোকজন গিয়ে সড়কটির মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে।