বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
অভিবাসী প্রবেশ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ লাল বলে ফিরবেন বিশ্বকাপ জয়ী ম্যাক্সওয়েল তৃতীয়বার বিয়ে করতে যাচ্ছেন শুভশ্রীর বোন দেবশ্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে গুলি করে হত্যা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ দিতে চায় না আ.লীগ: কাদের রূপগঞ্জে বসতঘরে আগুন দিয়ে গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আট বন্দরে মুছাপুর ইউনিয়নের সফল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মকসুদ হোসেনের নেত্রীত্বে ৩নং ওয়ার্ডে চলমান রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ নারায়ণগঞ্জে ৩৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল ৭ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানসহ ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বন্দরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট

বিলের মাঝখানে উপহারের ঘর, ডুবলো পানিতে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১, ৪.৫৭ এএম
  • ৪০৮ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অর্ধশতাধিক ঘর পানিতে ডুবে গেছে। সীমান্তের বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় এবং ঘরগুলো বিলের মাঝখানে নিচু জায়গায় হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে। ঘরগুলোর চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বসবাসরত পরিবারগুলো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য এ উপজেলায় মোট ২২৯টি ঘর বরাদ্দ এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে ৫০টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ঘরগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।

বুধবার (২৮ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার থেকে পূর্ব দিকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত সড়কের কাছাকাছি সরকারি উদ্যোগে নির্মিত ২৮টি ঘর পানিতে ডুবে রয়েছে। ঘরগুলোর চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। নৌকা ছাড়া বের হওয়ার উপায় নেই। সেখানে চার-পাঁচটা পরিবার ব্যতীত বাকিরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। একইভাবে ডুবে রয়েছে ওয়াব্রাংয়ের ২৮টি উপহারের ঘরও।
হ্নীলার মৌলভীবাজারের উপহারের ঘরে পানিবন্দি সমিরা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। নৌকায় করে খাবার এনে খেতে হচ্ছে। কেউ সহায়তা দিতে আসেনি। এখানে ২৮টি পরিবারের মধ্য আমরা চার পরিবার ছাড়া বাকিরা অন্যত্র চলে গেছেন। আমাদের কোনও স্বজন নেই, তাই পানিবন্দি থাকার পরও কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছি না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মূলত এই এলাকায় কিছু সুবিধাভোগী লোক বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট বন্ধ রাখার কারণে আমরা সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। তাছাড়া সরকার আমাদের যেখানে ঘর দিয়েছে, সেটি ছিল অনেক নিচু এলাকা।’

পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে ঘর পাহারা দিচ্ছিলেন সৈয়দ আলম ওরফে লালু। তার অভিযোগ, ‘স্থানীয় একটি চক্র সীমান্তের বেড়িবাঁধের স্লুইস গেইট বন্ধ রাখায় পানিবন্দি হয়েছি! এ ঘরটি আমার একমাত্র সম্বল, তাই পরিবারের নারী সদস্যদের অন্যত্র পাঠিয়ে এখানে অবস্থান করছি। তাছাড়া অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। পানি নেমে গেলে হয়তো আবার ফিরবেন। আজকে দুই দিন ধরে ঘরে চুলা জ্বালাতে পারিনি। এখানে সুপেয় পানি ও কোনও খাবারের ব্যবস্থা নেই। কষ্টের দিন কাটাচ্ছি আমরা।’

ঘর বরাদ্দ পাওয়া মোহাম্মদ আক্কাস অভিযোগ করে বলেন, ‘জমি নির্ধারণকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকবার নিষেধ করেছি, এটি নিচু জায়গা, এখানে ঘর করার জন্য উপযোগী নয়। দীর্ঘদিন ধরে আমার এই এলাকায় বসতি। ফলে ধারণা ছিল, এখানে ঘর নির্মাণ করলে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাবে এবং তাই হয়েছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, হ্নীলা ইউনিয়নের আবুল কালাম, মো. সাবের, সৈয়দুল আমিন ও হোসেন বলিসহ লবণ চাষিদের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত সড়কের বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট বন্ধ রেখেছে। ফলে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে এলাকাটি পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিন হোসেন বলেন, ‘কয়েকজন অসাধু লবণ চাষির জন্য তাদের পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাঁচ শতাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন। সেখানে খাবার পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিয়েছে।’

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘বেড়িবাঁধের স্লুইস গেটের অভাবে এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরও রয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পানি কারণে কমছে।’

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্ত সড়কে বেড়িবাঁধের স্লুইস গেটের যে সমস্যা সেটি সমাধানের কাজ চলছে। আর কারা গেট বন্ধ রাখছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সীমান্ত সড়কের বেড়িবাঁধের স্লুইস গেটের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। যাতে পানি না জমে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোর খোঁজ রাখছি। তাছাড়া টেকনাফে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই মুহূর্তে যেসব পরিবারে প্রাণহানি ঘটনা ঘটেছে তাদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি এবং পানিতে ডুবে যাওয়া সব জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com