শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন

তৈমূর-মামুন দ্বন্দ্বের নেপথ্যে ভিন্ন টার্গেট

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১১.১৮ পিএম
  • ৪৮০ বার পড়া হয়েছে

২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে বিএনপি একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছিল। এরই অংশ হিসেবে দেশব্যাপী মেয়াদোত্তীর্ণ সব সাংগঠনিক কমিটি পুনর্গঠন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ছিল দলটির।
কিন্তু কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা অযোগ্যদের কমিটিতে স্থান দেয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ীণ হচ্ছে। তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা পড়েছে।
বিরোধ এখন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে ওই কমিটি সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুুদের। যদিও মামুন মাহমুদ বরিশালের সন্তান।
সূত্রমতে, জেলা কমিটি পুনর্গঠনে আহŸায়ক কমিটি নিয়ে জটিলতায় আছে বিএনপির হাইকমান্ড। বেঁধে দেওয়া সময় থানা-উপজেলা কমিটি করতে পারেনি অনেক জেলার সাংগঠনিক ইউনিট কমিটি।
যারা কাজ করছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কেন্দ্র থেকে এসব কার্যক্রমের নজরদারি না থাকায় পকেট কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার অভিযোগও আছে। কমিটি গঠন নিয়ে অনেক লিখিত অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির দপ্তরে জমা পড়ছে।
প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পে ভোট চাওয়া ব্যক্তিকে সোনারগাঁ বিএনপির নেতৃত্বে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।
অভিযোগ উঠেছে ব্যাপক বাণিজ্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পে প্রকাশ্যে কাজ করা মোশারফ হোসেনকে সোনারগাঁও বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ওই নেতা। তবে, এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে জেলা ও সোনারগাঁও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ােভ বিরাজ করছে।
মোশারফ হোসেন মূলত বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের আমলে গঠিত ওরা এগারজনের সদস্য। তিনি বিগত দুটি উপজেলা নির্বাচনে সরাসরি নৌকা মার্কার প্রার্থীর পে ভোট চেয়েছেন। সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মোশারফের ঘনিষ্ঠ। ২০১৫ সালে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানকে বাদ দিয়ে কালামের পে মোশারফকে মাঠে কাজ করতে দেখা যায়।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ নেত্রীর ছেলেকে একই থানা বিএনপির সদস্য সচিব করতে ব্যাপক চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ। ইতোমধ্যে শাহ আলম হীরাকে সদস্য সচিব করার জন্য লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন মামুন মাহমুদ।
এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় চলছে বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক ােভ।
সূত্র জানায়, শাহ আলম হীরা নিজেও একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি শামীম ওসমান সমর্থক গোষ্ঠীর একজন কর্মী হিসেবে সিরাজ মন্ডলের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। এছাড়া তার মা রাশেদা বেগম সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
ভাই বরকত আলী বাপ্পা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার আরেক ভাই খুরশেদ আলম মনা শ্রমিক লীগ ও আন্ত:জেলা ট্রাক চালক সাইলো শাখার যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়াও শাহ আলম হীরার স্ত্রীর বড় ভাই সালাম মাহমুদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান সিদ্ধিরগঞ্জের শাহ আলম হীরাকে কমিটিতে রাখাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপিকে দুই টুকরো করে দিলেন মামুন মাহমুদ। ২৬ আগস্ট বিকেলে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে কমিটি গঠনকল্পে চলমান বৈঠক এই ঘটনার বিরোধীতা করেন তৈমূর। তিনি বৈঠক ছেড়ে উঠে আসলে আহŸায়ক কমিটি অধিকাংশ সদস্য তার সাথে সাথে বৈঠক ছেড়ে চলে আসেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির আহŸায়ক আবদুল হাই রাজু এবং সদস্য সচিব হিসেবে শাহ আলম হীরার নাম প্রস্তাব করেন মামুন মাহমুদ। আর এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা সৃষ্টি হয়। অনেকে প্রচন্ড ােভ প্রকাশ করে জেলা বিএনপির এই সদস্য সচিবের প্রতি।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিশনে চলেন মামুন মাহমুদ। ফলে সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতেই হীরাকে সদস্য সচিব বানাতে ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেন। তবে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীর চাওয়া সদস্য সচিব হিসেবে কাউন্সিলর ইকবালকে। তিনি গেল চার মাস ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
অন্যদিকে ত্যাগী ও ৩ ডজন মামলার আসামি আনোয়ার সাদাত সায়েমকে রূপগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব করতে বিরোধ করছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ তার অনুসারীরা। অথচ সায়েম ১৯৯৫ সাল থেকে রাজনীতি করছেন। তিনি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ছাত্রদলের ৩ বার সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
এখনো তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সায়েমের হাতে সদস্য সচিব পদ থাকলে দল আরো শক্তিশালী হবে বলেও ত্যাগী নেতারা মনে করছেন। তাছাড়া এখানে অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুনকে আহŸায়ক হিসেবে চুড়ান্ত করা হয়েছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু কোনো নির্বাচনে মাঠে না থাকলেও রূপগঞ্জ বিএনপির কমিটি নিয়ে বিরোধ করছেন। আড়াইহাজারে আহŸায়ক ও সদস্য সচিব পদ নিয়েও বেশ সমালোচনা হচ্ছে।
তবে, তৈমূর আলম খন্দকার ঢাকার বৈঠক বয়কট করার কারণে তৃণমূল খুশি হয়েছেন। তারা এমন রূপেই তৈমূর আলমকে দেখতে চেয়েছিলেন। কেননা, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে যেভাবে রাহুগ্রাস করছিলো। এই রাহুমুক্ত করার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তৈমূর। তৃণমূলও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন।
দপ্তর সূত্রমতে, স¤প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ বেশ কয়েকটি থানা-উপজেলা-পৌরসভার কমিটি গঠনে ত্যাগী ও পরীতি নেতাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা। এতে বলা হয়েছে, জেলার আহŸায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে পাশ কাটিয়ে নিজের লোক দিয়ে কমিটি দিতে চাচ্ছেন সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আড়াইহাজার উপজেলায় আহŸায়ক হিসেবে ইউসুফ মেম্বারের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে। গত ১৫ বছরে তাকে কোনো দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে তিনি সাভার থাকেন। সার্চ কমিটি তাকে আহŸায়ক পদে নাম দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের মতো পাবনায় কমিটি হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যা চলছে। সেখানে এক প্রভাবশালী নেতার অনুসারী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করতে গিয়ে কমিটি গঠনে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় দ্ব›েদ্ব^ মাদারীপুরের কমিটি বহু দিন ধরে স্থগিত। ল²ীপুর ও ফরিদপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলায় বহুদিন ধরে কোনো কমিটি নেই। এ রকম হ-য-ব-র-ল অবস্থা সব কমিটিতেই রয়েছে।
পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী জেলা, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতীরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ময়মনসিংহ মহানগর, ময়মনসিংহ উত্তর ও দণি, নেত্রকোনা, গাজীপুর জেলা, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সিলেট জেলা, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দণি ও উত্তর সাংগঠনিক জেলার শাখার আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদের ৩ মাসের মেয়াদ দিলেও তা বহু আগেই শেষ হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক পুনর্গঠনের বিষয়টি দলের হাইকমান্ড এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য সাংগঠনিক জেলার প্রতিবেদন নেয়ার জন্য গত ২৪ আগষ্ট থেকে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ল²ীপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলা বাদে ৭৮ সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে এই বৈঠক হবে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দ্রæত সময়ের মধ্যে জেলার অধীন থাকা থানা-উপজেলাসহ সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
কমিটি পুনর্গঠনে দলীয় নির্দেশনার বিষয়ে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, থানা-উপজেলা ও পৌরসভাসহ সব পর্যায়ের কমিটি দ্রæত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ত্যাগী, পরীতি ও সক্রিয়দের দিয়ে এসব কমিটি করতে বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort