শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় লিটন ব্যাপারী যখন মারা যান তখন তার স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার গর্ভে জন্ম নেওয়া রাতুল ব্যাপারী এখন ১৩ বছরের কিশোর। সেই কিশোর রাতুল বাবাকে না দেখলেও বাবার হত্যাকারীদের বিচার দেখতে এসেছে আদালতে।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর লিটন ব্যাপারী হত্যা মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তারিক এজাজ এই রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন মজিবর মাদবর, আওলাদ মাদবর, সুজন মাদবর, মোকাদ্দেস মোল্লা, রবুল্লা মাদবর, আব্বাস মাদবর, জলিল খা, এস্কেন্দার মোল্লা, চাঁন মিয়া মাদবর, মকবুল মাদবর ও আল আমিন মাদবর। এছাড়া নুরুল আমিন খাকে তিন বছর এবং মনির মোল্লাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে জলিল খা, এস্কেন্দার মোল্লা, চাঁন মিয়া মাদবর, মকবুল মাদবর ও আল আমিন মাদবর এবং এক বছর সাজাপ্রাপ্ত মনির মোল্লা পলাতক আছেন।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে ২০১০ সালের ৯ মার্চ জাজিরা উপজেলার রাড়ীপাড়া এলাকার লিটন ব্যাপারীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন প্রতিপক্ষ জলিল খা ও তার লোকেরা। ঘটনার তিন পর লিটন ব্যাপারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এই ঘটনায় লিটনের ভাই মতিউর রহমান জাজিরা থানায় ৩৩ জনকে আসামি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আরও দুইজনসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়। আদালত দীর্ঘ সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ৩৫ জনের মধ্যে ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বাকি আসামিদের খালাস দেওয়া হয়
কিশোর রাতুল ব্যাপারী বললো, জন্মের পর আমি বাবাকে দেখতে পাইনি। আজ আমি বাবার হত্যাকারীদের বিচার দেখতে এসেছি। হত্যাকারীদের প্রতি আমার ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নেই। আদালতের কাছে আমার একটাই দাবি, হত্যাকারীদের সাজা যেন বহাল থাকে।
মামলার বাদী মতিউর রহমান বলেন, আমার ভাইকে আসামিরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে প্রাথমিকভাবে আমরা সন্তুষ্ট। তবে একটাই দাবি, উচ্চ আদালতে যেন এই রায় বহাল থাকে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আদালতের এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা হযরত আলী বলেন, দীর্ঘ ১৩ বছর পর আলোচিত লিটন ব্যাপারী হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। এই রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করছি। যদি আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে যায়, তাহলে আমরা আদালতের মাধ্যমে তার জবাব দেবো।