শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েমের লড়াইয়ে ভোটের অধিকার পেলো আলীরটেক ইউনিয়নবাসী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪.৫৯ এএম
  • ২১৭ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। গত বছর নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান আলীরটেক ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে এবারের নির্বাচনেও মতিউর রহমান মতিকে সমর্থন ঘোষণা করেছিলেন। ওই ঘোষণার পর মতি ও তার লোকজন এলাকায় প্রচার করতে থাকেন এবারের নির্বাচনেও বিনা ভোটে মতিউর রহমান চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্যযে, গত নির্বাচনেও সায়েম শক্ত প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু মতি অনেক আকুতি মিনতি করে, এবারের নির্বাচনে সায়েমকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়ে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে অনুরোধ করিয়ে নির্বাচন থেকে সরানো হয়েছিল।

মতি আবারো বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন এমন প্রচারণার পর আলীরটেক ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামেন এবারের নির্বাচনে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদ। প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে টানা কয়েক মাস সায়েম আহমেদ আলীরটেক ইউনিয়নবাসীকে নিয়ে নির্বাচন ও ভোটের দাবিতে আন্দোলন করে আসেন। সায়েম আহমেদের এমন সাহসিকতায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন সায়েম আহমেদকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাওয়ার দাবি নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশি হিসেবে নির্বাচনী মাঠে লড়ে যান। সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ একজোট হয়ে সায়েমকে চেয়ারম্যান বানাতে কাজ করে যান। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতির জনপ্রিয়তা শূন্যে নেমে আসে।

কিন্তু নির্বাচন নাগাদ সময়ে আলীরটেক ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদের সঙ্গে নৌকার লড়াইয়ে নামেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। তিনি নৌকা প্রতীক পেয়ে যান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন সাযেম আহমেদ। সায়েম মনোনয়নপত্র দাখিলের পর নৌকা প্রতীক পেলেও এলাকার লোকজনকে ডেকেও কাছে আনতে পারেননি মতি। এর আগে মতি এলাকায় প্রচার করেন সায়েম মনোনয়ন পত্রটি দাখিল করতেই পারবেন না। কিন্তু মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর সায়েম আহমেদের নির্বাচনী মাঠ হয়ে ওঠে চাঙ্গা। এমন পরিস্থিতিতে নৌকার প্রার্থী মতির সঙ্গে কোনো লোকজনকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা আরো বলছেন- প্র্রভাবশালীরা মতির পরাজয় যখন নিশ্চিত দেখেছে, তখন জামাত হেফাজত ঘেষা সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে মাঠে নামায়। মতি অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। প্রভাবশালীরা মতির নৌকা বাতিল করে জাকির হোসেনকে দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসে। এরপর কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও জেলা হেফাজতে ইসলামের সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজত নেতাকর্মীদের নিয়ে জাকির হোসেন নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্রটি দাখিল করেন।

এমন পরিস্থিতিতে জাকির হোসেন নৌকা প্রতীক নেয়ায় একদিকে বিএনপি জামাতের লোকজন জাকির হোসেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, অন্যদিকে জামাত হেফাজত ঘেষা জাকিরকে নৌকা দেয়ায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরাও মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। ফলে জাকির হোসেনের অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে ওঠে। যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েম এলাকায় গেলে হাজার হাজার জনতার ভীড় জমে, সেখানে জাকির হোসেন কর্মীসভা ডেকেও লোকজন পাচ্ছেন না। এবার জাকির হোসেনও বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে নানা ষড়যন্ত্র আটে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েম আহমেদকে নির্বাচন থেকে সরাতে সায়েম আহমেদ ও তার আত্মীয়স্বজন-নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসএম সালেহ আহমেদ খোকন নামের এক ব্যক্তিকে বাদী সাজিয়ে একটি হয়রানিমুলক মামলা দায়ের করে দেন।

জাকির হোসেনের এমন কুটকৌশলের পর অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে মিথ্যা মামলায় স্বতন্ত্র প্র্রার্থীর আত্মীয়স্বজন ও নেতাকর্মীদের হয়রানি না করার দাবিতে এবং নিরীহ মানুষদের নির্যাতন না করার দাবি তুলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) সহ ৮টি রাষ্ট্রীয় দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ।

গত ২৫ অক্টোবর সোমবার ও ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ এসব দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন। লিখিত আবেদনে তিনি অভিযোগ তুলেছেন- ইউপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ ও তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কল্পকাহিনী সাঁজিয়ে গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হয়রানিমুলক মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রভাবিত করে এলাকার নিরীহ জনগণ সহ তার লোকজনকে এলাকা ছাড়ার হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

২৫ অক্টোবর সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশন, পুুলিশ হেডকোয়াটার্স আইজিপির কমপ্লেইন মনিটরিং সেল, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেন তিনি। এছাড়াও ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কমিশনার ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একই আবেদন তিনি দাখিল করেছেন।

সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর বুধবার দুপুরে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সদর উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আতাউর রহমান ভূঁঞার হাত থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদের আনারস প্রতীক গ্রহণ করেছেন প্রস্তাবকারী মোহাম্মদ হোসেন ও সমর্থনকারী হাজী মনির হোসেন। সায়েম আহমেদ অবেশেষ আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। সায়েম আহমেদের দীর্ঘ এই লড়াইয়ে আলীরটেক ইউনিয়নবাসী তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেলো। যে কারনে আলীরটেকবাসী সায়েমের এমন সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চায় বলে আলীরটেকবাসী জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort