আলোচিত চাঞ্চল্যকর সাত খুনের রায় দ্রুত নিস্পত্তি করে তা কার্যকরের দাবিতে আদালত চত্বরে জেলা আইনজীবী সমিতি ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেছে। চাঞ্চল্যকর এই সাত খুনের ৯ বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মানববন্ধনে সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, প্রকাশ্যে রাজপথ থেকে তুলে নিয়ে গুম করে তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের। আজকে নয় বছর পূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত সাত খুন রায় কার্যকর করা হয়নি। সাত খুন নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
এই হত্যাকাণ্ড হওয়ার পর আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। আমরা দ্রুত এ রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। তা নাহলে আমরা নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা ও সাধারণ মানুষ আবারও রাস্তা নেমে আসবো।
রাষ্ট্রের কাছে দাবি, এই মামলাটির দ্রুত শুনানি এবং নিষ্পত্তি করে দ্রুত কার্যকর করা হোক। কারণ সাত খুন আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ড কার্যকরের জন্য তাকিয়ে আছে সারা দেশ। এটা কার্যকর হলে দৃষ্টান্ত ও যুগান্তকারী রায় হয়ে থাকবে।
সাত খুন মামলার প্রধান আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, এড. আওলাদ হোসেন, এড. জাকির হোসেন, এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, এড. মশিউর রহমান শাহিন, এড. কাজী আঃ গাফফার, এড. আব্দুল বারী ভূঁইয়া, এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, এড. জসিম উদ্দিন, এড. আজিজুর রহমান মোল্লা, এড. হেলাল উদ্দিন সরকার, এড. কায়সার আলম চৌধুরী টুটুল, এড. মাহমুদুল হাসান আলমগীর, এড. সালাউদ্দিন সবুজ, এড. নুরুল আমিন মাসুম, এড. রোকন উদ্দিন, এড. রঞ্জিত চন্দ্র দে, এড. শেখ আঞ্জুম আহম্মেদ রিফাত, এড. আসমা হেলেন বিথী, এড. আবুল কালাম আজাদ, এড. কে এম সুমন, নিহত এড. চন্দন শীলের ভাগিনা এড. সুমন,নিহত তাইজুল ইসলামের ছোট ভাই মো. রাজু, নিহত জাহাঙ্গীরের মা মেহেনুর, স্ত্রী শামসুর নাহার নূপুর, কন্যা রোজা মনিসহ সাধারণ আইনজীবী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে এক মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনা থেকে সাত জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন ফতুল্লা থানায়।
পরে আদালত আসামিদের স্বীকারোক্তি, জবানবন্দি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৩৩ মাস পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় প্রদান করেন। রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাত জনকে ১০ বছর করে এবং ২ জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট হাইকোর্ট সাত খুনের অন্যতম আসামি সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন, এমএম রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। আর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।