আগামী ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে বেশক’টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাকি পরিষদগুলোর মধ্যে৭টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে বেশ কমজোর।
তাদের নিজস্ব নেই কোনো ভোট ব্যাংক, নেই নেতাকর্মীর শক্তি, নেই সাধারণ মানুষের সমর্থন, নেই নিজস্ব কোনো শক্তি, শুধুমাত্র প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়া ছাড়া আর কিছুই তাদের অনুকুলে নেই। তারা তাকিয়ে আছেন প্রভাবশালীদের দিকেই। স্বপ্ন দেখছেন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার। এ কারনে এসব প্রার্থীদেরকে নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে কমজোর বলছেন।
স্থানীয়রা আরও বলছেন-সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকার প্রার্থীদের কারো কারো জামানত নিয়ে টানাহেছড়া লাগতে পারে। নিরপেক্ষ অবাদ সুষ্ঠু নির্বাচনে এদের কারোরই জয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না ইউনিয়নবাসী।
যাদের মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। এক সময় বিএনপি, বিএনপি থেকে জামায়াত ইসলাম, এখন তিনি হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে। তার মনোনয়নপত্র দাখিল করার সময় তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও জেলা সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। যে কারনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটাররা এখন ঝুঁকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েম আহামেদের দিকে। আবার নৌকা প্রতীক নেয়ায় জাকিরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপির লোকজনও। আলীরটেকে নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের লড়াইয়ের আন্দোলনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন সায়েম আহমেদ।
বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এহসান উদ্দীন আহমেদ। এখানে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোক্তার হোসেন। ইউনিয়নবাসী নৌকার প্রার্থী মোক্তার হোসেনকে এহসান উদ্দীনের ড্যামী প্রার্থী মনে করছেন। তারা মনে করছেন এহসান উদ্দীনের সঙ্গে লড়াই করার মত ভোটও পাবে না মোক্তার হোসেন।
নারায়ণগঞ্জর সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও পরাজিত প্রার্থী সদর থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন। এখানকার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে স্থানীয় এমপি সমর্থন দিলেও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখানে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন শিল্পপতি ফজর আলী। দুহাতে খরচ করে নির্বাচনী মাঠ ফজর আলীর দখলে নিচ্ছেন দিনকে দিন।
বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। কয়েক মাস পূর্বে দেলোয়ার হোসেনকে স্থানীয় এমপি সমর্থন ঘোষণা করেছিলেন। ওই মঞ্চেই বসা ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কাজিম উদ্দীন প্রধান। ফলে এখানে দেলোয়ার হোসেন প্রধানকেই শক্তিশালী মনে করছেন ইউনিয়নবাসী।
মুছাপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান। এখানে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। ইউনিয়নবাসী এখানে নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমানকে লাঙ্গলের ড্যামী প্রার্থী মনে করছেন। এখানেও লাঙ্গলের সঙ্গে লড়াই করার মত কোনো পুজি তৈরি করতে পারেনি মজিবুর রহমান।
বন্দরের ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আহামেদ। কিন্তু এখানে স্বতন্ত্র প্র্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা আজিজুল হক আজিজ। বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আহামেদের অবস্থা এখানে নড়বড়ে। সান নারায়ণগঞ্জকে ইউনিয়নবাসীর অনেকেই জানিয়েছেন- শেষতক আজিজুল হক আজিজ নির্বাচনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে সুষ্ঠু ভোট হলে মাসুমের জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আজিজুল হক আজিজের পিতা মরহুম আয়নাল হক ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুর পরবর্তীতে নির্বাচনে আয়নাল হকের সম্মানে তার ছেলে কামাল হোসেনকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করানো হয়। তাকে পরাজিত করে মাসুম আহম্মেদ নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন। রাজনৈতিক নানা কারনে এবার আয়নাল হকের পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ইউনিয়নবাসী। যদিও মাসুমের অবস্থা এখানে খারাপ হওয়ায় আজিজকে বসানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানাগেল।
মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। এখানেও নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে মদনপুর ইউনিয়নবাসী সালামের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনিয়নে তেমন কোনো উন্নয়ন তিনি করেননি। এমনকি সাধারণ মানুষের দ্বারে কাছেও যাননি। নৌকা প্রতীক মনোনয়ন পাওয়ার পরেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা যায়নি। ফলে এখানেও সুষ্ঠু ভোট হলে সালামের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারন এখানে বেশ জনপ্রিয়তা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন শ্রমিকলীগ নেতা রুহুল আমিন শেখ। সালামের অবস্থান নড়বড়ে হওয়ায় এখানে রহুল আমিন শেখকে নির্বাচন থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে।