দুর্দান্ত একটা দিন পার করার পরও শুক্রবার রাতে টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর শঙ্কা ভর করেছিল। দুই সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ও হাবিবুল বাশার রাতে এক আলোচনায় জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় দিনের সকালটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত দুটি উইকেট পড়লে রান সাড়ে তিনশ হওয়া কঠিন। তাদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করতে পারলেন না মুশফিক-লিটনরা। হতাশার দ্বিতীয় দিন কাটল। প্রথম দিনের চেয়েও দ্বিতীয় দিনের সকাল আরও ভয়ংকর হয়ে রইল। এক সেশনেই ছয় উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানে অলআউট বাংলাদেশ। দিনের বাকি দুই সেশনে পাকিস্তানের একটি উইকেটও নিতে পারল না স্বাগতিকরা। রিভিউ না নেওয়ার মাশুলও গুনতে হলো চরমভাবে। দিনশেষে বিনা উইকেটে পাকিস্তানের সংগ্রহ ১৪৫। দ্বিতীয় দিন শেষে হাতে পুরো ১০ উইকেট রেখে ১৮৫ রানে পিছিয়ে।
উইকেটে যে বোলারদের জন্য কিছু নেই, শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা তা জানিয়েছেন। টেস্টে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ এবং ভালো উইকেটে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হতাশাজনক বোলিং করলেন তারা কালও। আবু জায়েদ ও ইবাদত দুজন মিলে ২৪ ওভারে দিয়েছেন ৬১ রান, উইকেট নেই। ১৪৪ বলে উইকেট নেওয়ার কোনো সুযোগই তারা তৈরি করতে পারেননি। দুজনের বোলিং দেখে ধারাভাষ্যকাররা বারবার বলেছেন, খুবই সাধারণ বোলিং। তবে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ভাঙার সুযোগ তৈরি হয়েছিল ১৩তম ওভারে। চট্টগ্রামে আগের টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রিভিউ না নেওয়ার মাশুল দিয়েছিল বাংলাদেশ। তিনটি রিভিউ থাকার পরও পাকিস্তান ইনিংসের শুরুতে রিভিউ না নিয়ে মুমিনুল হক হাঁটলেন সেই পথে। তাইজুল ইসলামের বল একটু ভেতরে ঢুকে ছোবল দেয় আব্দুল্লাহ শফিকের প্যাডে। দ্রুত ব্যাট নামান তিনি। তাই ব্যাট না প্যাড, কোনটায় আগে লেগেছে বল, বোঝা কঠিন ছিল। উইকেটের জন্য ঝুঁকি নিতেই হতো। সেটা নেননি মুমিনুল। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল আগে প্যাডে লাগে। রিভিউ নিলে ফিরে যেতেন শফিক। সে সময় নয় রানে ছিলেন তিনি। বারবার ক্যামেরায় তখন তাইজুলকে দেখা গেছে, হতাশা তার চোখে-মুখে। প্রশ্ন উঠল, কবে ভিভিউ নেওয়া শিখবে বাংলাদেশ। ওই একটা সুযোগ ছাড়া বাকিটা পথ সাবলীলভাবে কাটিয়েছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার। কোনো সুযোগ দেননি। দিনশেষে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আবিদ আলী। ১৮০ বলে অপরাজিত রয়েছেন ৯৩ রান করে। তার ইনিংসে দুই ছয় ও নয় চার। আব্দুল্লাহ শফিক অভিষেকটা রাঙালেন হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে। খেললেন সাবধানী এক ইনিংস। ১৬২ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত রয়েছেন।
দিনের শুরু থেকেই হতাশা। আগের দিন সেঞ্চুরি পূর্ণ করা লিটন দাস যোগ করেন আর মাত্র এক রান। প্রথম ওভার থেকেই হাসান আলী পরপর আউটসুইং দিয়ে হঠাৎ ইনসুইং দিয়ে বল ভেতরে ঢোকাচ্ছিলেন। প্রথম ওভারেই সাফল্য পেয়ে যান। লিটন দাসের পায়ে লাগা বল মনে হয়েছিল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যাবে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সফল পাকিস্তান। পঞ্চম উইকেটে লিটন ও মুশফিকের ২০৬ রানের জুটি ভাঙে। মুশফিক ৯১ রানে পৌঁছে থমকে যান। কিছুটা নড়বড়ে দেখায় তাকে। ফাহিম আশরাফের বলে ৯১ রানেই আউট মুশফিক। এ নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নব্বই ছুঁয়েও সেঞ্চুরিতে যেতে পারলেন না তিনি চারবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব মিলিয়ে আটবার। দুটিই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। আশরাফের বলটা আগে মুশফিকের প্যাডে লাগে। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন মুশফিক। প্রথমে বল প্যাডে লাগলেও এরপর ব্যাট, বল ও প্যাড ছিল একই জায়গায়। আউট হয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে ফেরেন ড্রেসিংরুমে।
উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারলেন না। তাইজুল ২৮ বল খেলেও শাহিন শাহ আফ্রিদির গতি ঠিকঠাক বুঝতে পারেননি। সতীর্থদের যাওয়া-আসা দেখেছেন মিরাজ। হাসান আলীর পরপর দুই বলে বিদায় নেন দুই পেসার আবু জায়েদ ও ইবাদত হোসেন। বাংলাদেশ প্রথম দিন সকালে চারটি ও দ্বিতীয় দিন সকালে হারিয়েছে ছয় উইকেট। প্রথম দুদিনে বাকি চার সেশনে কোনো উইকেট পড়েনি। আজ তৃতীয় সকালের অপেক্ষায় স্বাগতিকরা। নিজেরা যেভাবে হুড়মুড় করে উইকেট হারিয়েছে, তেমনি পাকিস্তানি ব্যাটারদেরও তুলে নেওয়ার আশা। বোলাররা সেই কাজ কতটুকু পারবেন, এ নিয়ে সন্দেহ খোদ টিম ম্যানেজমেন্টের।