রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন

স্বৈরাচার হাসিনা সরকার প্রতিটি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে : তারেক রহমান

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১১.১১ এএম
  • ১ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বৈষম্যের শিকার যাতে মানুষ না হয়, সেই প্র্যাকটিসটা আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। আমরা আগামীতে যা করবো তা জনগণকে সাথে নিয়ে সবাইকে সাথে নিয়েই করতে চাই। বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, প্রতিটি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা দেখেছি কোনটা ডামি নির্বাচন, কোনটা নিশিরাতের আর কোনটা ভোট ডাকাতির নির্বাচন। কোনবারই প্রকৃত জনপ্রতিনিধি ছিল না। তাই তারা যা ইচ্ছা তা-ই করেছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে “রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি” শীর্ষক বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটি। এতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য নিজের ৩১ দফার বিষয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আগত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তারেক রহমান।

আওয়ামী সরকারের আমলে নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা গায়েবি মামলা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করাবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এমন একটি দল যে দলের প্রতি জনগণের আস্থা আছে। বিএনপির সকল কিছুর উৎস জনগণ। তাই জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। জনগণের সঙ্গে থাকলে সব কিছু অর্জন সম্ভব। আমাদের টিকে থাকতে হলে জনগণের সাথে থাকতেই হবে। আমরা আগামী দিনে চাইছি প্রকৃত একজন জনপ্রতিনিধি। আগামী দিনে যারা যোগ্য, সেই যোগ্য মানুষটিকে যোগ্য জায়গায় স্থান যদি আমরা দিতে পারি, তাহলেই এই দেশটাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারব।

তিনি বলেন, কপালে বিএনপির সিল থাকলে প্রত্যেকের নামে মিথ্যা মামলা আছে। বিএনপির প্রথম অধ্যায়ের লক্ষ ছিলো স্বৈরাচার সরকারের পতন। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বড় স্বৈরাচার বা মাফিয়া ছিলো তার পতন হয়েছে। স্বৈরাচার সরকার প্রত্যেকটা সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের দ্বিতীয় অধ্যায় হলো ৩১ দফার মধ্যে ১৩ জুলাই ২০২৩ উল্লেখ করা হয়েছিলো। পরে ২৭ হতে ৩১ দফা দিয়েছি যা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে। বিএনপি এমন একটি দল স্বৈরাচার পতনের পর আমাদরে উদ্দেশ্য ও লক্ষ কি সেটাই হচ্ছে ৩১ দফা। সেই ৩১ দফায় স্বৈরাচার পতনের পর কিভাবে দেশ পুর্ণগঠন হবে। দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবো তার জন্যই ৩১ দফা রচিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, এই ৩১ দফার মধ্যে কোন ব্যক্তি বা দল কোন কিছু প্রস্তাব দেয় সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। জনগণ বিএনপির দিকে তাকি আছে। বিএনপি এমন একটি দল যা জনগণে আস্থা রাখে। এদলের আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব নেতাদের। একটা অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। ফাঁকা মাঠ বলে বসে থাকলে চলবে না। আপনারা এখন থেকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ৩১ দফা জনগণের কাছে তুলে ধরুন। আস্থা অর্জন করুন তবেই আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।

নেতাকর্মীদের ৩১ দফার উপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কবিরের এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এটি গায়েবি মামলা নামে সারাদেশে পরিচিত। অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, চলমান প্রক্রিয়া এটি। একবারে হয়তো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে নিশ্চয় আমরা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করাব বা করাতে সক্ষম হবো।

বগুড়ার অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে আনছে, কিন্তু আদালতে সঙ্গে সঙ্গে জামিন হচ্ছে। অথচ আগে বিএনপির নেতাকর্মীর জামিন হয়নি এত দ্রুত। এই বিচারকদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে ওদের পার্থক্যটা এখানেই। আমরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, সেটিকে আমরা ভাঙতে চাই। বৈষম্যের শিকার যাতে মানুষ না হয়, সেই প্র্যাকটিসটা আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন। বিগত স্বৈরাচার সরকার শুধু বিচার ব্যবস্থা নয়, প্রতিটি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা আগামী দিনে চাইছি প্রকৃত একজন জনপ্রতিনিধি। যারা যোগ্য, তাদের যোগ্য জায়গায় স্থান দিতে চাই। তাহলেই এই দেশটাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারব।

রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সকল তথ্য নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কি না, এমন আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, এখানে একটি বিষয় আছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কিছু বিষয় থাকে। এই বিষয়, যেগুলোকে স্বাভাবিক নিরাপত্তার নজরে দেখতে হবে। সব ডিসক্লোজ করা সব সময় বোধ হয় করা যায় না, সম্ভব না। এর বাইরে যেগুলো থাকবে সেগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ থাকবে। যে কেউ দেখতে পারবে। এই সিস্টেমটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে।

ফারাক্কা বাঁধ থেকে পদ্মার পানির নায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন আরেক নেতা। এ সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। পতিত স্বৈরাচার সরকার ইচ্ছা করেই করেনি প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য। এটা আন্তর্জাতিক লবি, আমরা সময়মত অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করব। প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়েই কাজ করব আমাদের নায্য হিস্যা আদায়ের জন্য।

দলের এক নেতার আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান জানিয়েছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি বৃক্ষরোপণের ইচ্ছে আছে তার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এই কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। গাছ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষ রোপণ করব।

এর আগে সকাল ৯ টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতের সভাপতিত্বে কর্মশালা উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।

বিএনপি প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ডা. মাহাদী আমিন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম হীরা, সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিব, অ্যাড. নেওয়াজ হালিমা, আমিরুল ইসলাম আলিম, ওবায়েদুর রহমান চন্দন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুর্নবাসন সহ সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort