আড়াইহাজারে দুপ্তারা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলমকে (৩৫) মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তাকে বাঁচাতে তার বাবা-মা-ভাই ও চাচার অনুনয়-বিনয় ও প্রাণ ভিক্ষার আঁকুতিতে কর্ণপাত করেনি ঘাতকরা। স্বজনদের সামনেই চলে মাহাবুবের উপর ধারাবাহিক পাশবিক নির্যাতন।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুপ্তারা ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসমত আলীর নেতৃত্বে কিসমত, কামাল, হান্নান, আল-আমিনসহ অজ্ঞাত নামা সন্ত্রাসীরা কালি বাড়ি বাজার থেকে মাহবুবকে তুলে নিয়ে যায়।
পরে সিংরাটি এলাকায় হাসমত আলীর বাড়িতে একটি কক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রেখে তিনিসহ অন্যরা মাহবুব আলমকে মারপিট করাসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে আঘাত করে। এ সময় মাহবুব আলমের ভাই হাবিবুর রহমান (৪০) কেও মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে তারা।
এবপর্যায়ে নির্যাতনের কারণে মাহবুব অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অন্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত মাহবুব আলম দুপ্তারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সিংরাটি এলাকার হাজী আব্দুল হানিফার ছেলে এবং গাউসিয়া মার্কেটের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় আশপাশের এলাকা থেকে কামাল, ইসমত আলী এবং পাভেল নামে সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত মাহবুবের চাচা মজিবর রহমান বলেন, হাসমত মিয়ার কাছে মাহাবুব তার একটি জমি বিক্রির জন্য ৩ লাখ টাকা বায়না নেয়। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ হাসমত সেই জমি নেবে না জানিয়ে বায়নার টাকা ফেরৎ চায়। মাহাবুব টাকা ফেরতের জন্য সময় চায়। এনিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। সেই টাকা দিতে না পারায় তাকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
মজিবর আরও বলেন, মাহাবুবের বাবা হানিফ মিয়া, মা তাহেরা বেগম, দুই ভাই মহিবুর ও হাবিবুর এবং আমি হাসমতের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মাহাবুবকে তারা মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্যাতন করছে। তারা লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তাকে পেটাচ্ছে। ওই সময় আমরা টাকা পরিশোধ করে দেবো জানিয়ে মাহাবুবের প্রাণ ভিক্ষা চাই।
কিন্তু আমাদের অনুনয় বিনয়ে তাদের মন একটুও গলেনি। উল্টো আমাদের সামনেই হাতুড়ি দিয়ে পর্যায়ক্রমে তার মাথায় আঘাত করে মাথার খুলি ফাটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় এবং ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে আঘাত করে। ওই দৃশ্য সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।
এক পর্যায়ে মাহাবুব জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা আমাদের বলে এবার নিয়া যা। এভাবে দীর্ঘ ১ ঘন্টা মাহাবুরের উপর চলে নির্যাতন। আমরা দ্রুত তাকে নিয়ে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখান থেকে আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। দুপুর ২টায় আমারা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মাহাবুবের বাবা হানিফ মিয়া ও মা তাহেরা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ওরা প্রভাবশালী। তাই আমাদের সামনেই পোলাডারে পিটাইয়া মাইরা ফালাইলো। আমরা এর বিচার চাই।
নিহত মাহবুব আলমের বড় ভাই হাবিবুর রহমান জানান, আমি আমার ভাইকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি মারধর করে। আমার ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। তারা আমার চোখের সামনে আমার ভাইকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করলো। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
আড়াইহাজার থানার ওসি মুহাম্মদ ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব জানান, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।