মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং দেশটির গণতন্ত্রপন্থী কারাবন্দি নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করতে চান। রাজধানী নেইপিদোর জান্তা নিয়ন্ত্রিত আদালতে সু চির বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যে কোনো দিন হতে পারে এ বৈঠক।
শনিবার এক বিবৃতিতে জেনারেল হ্লেইং বলেন, ‘তার (সু চি) বিরুদ্ধে চলমান আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা (তার সঙ্গে) আলোচনা শুরু করতে চাই। অবশ্য এই আলোচনা হবে কিনা তা নির্ভর করছে তার সম্মতির ওপর।’
এর আগে গত জুলাই মাসে জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এবং বর্তমানে কারাবন্দি সু চির সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের সংলাপ ‘অসম্ভব নয়’।
মিন তুন বলেছিলেন, ‘(সু চির সঙ্গে) সংলাপ অসম্ভব— এটা আমরা বলতে পারিনা।’
জুলাইয়ে মিন তুন যা বলেছিলেন, শনিবারে জেনারেল হ্লেইংয়ের বিবৃতির মাধ্যমে কার্যত এ বিষয়ে এক ধাপ এগোলো জান্তা।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে সংঘটিত এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি এবং কারাবন্দি হন। সু চি ও তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর দেশটির সরকার গঠন করে সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, হ্লেইং হন সেই সরকারের প্রধান।
কিন্তু মিয়ানমারের গনতন্ত্রপন্থী জনগণ সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। সেনা বাহিনীর অভ্যুত্থানের পরই জনবিক্ষোভ শুরু হয় দেশটির শহরে শহরে। দেশজুড়ে টানা বিক্ষোভ চলতে থাকায় তা দমনে এক পর্যায়ে প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মিয়ানমারে নিহত হয়েছে প্রায় ২২০ জন। নিহতদের মধ্যে একাধিক শিশুও রয়েছে।
পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আন্দোলনরত জনগণের একটি অংশ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে এবং সেসব গোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে।]
এই পরিস্থিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ান, যে জোটের সদস্য মিয়ানমারও— চাপ দেওয়া শুরু করে ক্ষমতাসীন জান্তার ওপর। আসিয়ান জোটের পক্ষ থেকে থেকে মিয়ানমারে রক্তপাত বন্ধ ও স্থিতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নোয়েলিন হেইজার মিয়ানমার সফর করেছেন। সেই সফরেও জান্তাপ্রধান হ্লেইং বরাবর তিনি সু চিকে মুক্তি দিতে আহ্বান জানান।
সু চিকে বন্দি করার পর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে জান্তা। নেইপিদোর বিশেষ আদালতে এসব মামলার বিচার চলছে। ইতোমধ্যে এক মামলার রায়ে সু চি কে ১৭ বছরের কারদণ্ড দেওয়া হয়েছে।