বাংলাদেশেই সিনােফার্মের টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষীক সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। চীনের সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি সই হয়।
চুক্তি অনুযায়ী চীন থেকে পাঠানো বাল্ক পরিমাণে উৎপাদিত আধা প্রস্তুত করা টিকা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত ও বিতরণের কাজ হবে বাংলাদেশে।
সোমবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনসে (বিসিপিএস) মিলনায়তনে এ চুক্তি সই অনুষ্ঠিত হয়৷
অনুষ্ঠানে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে যৌথভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে সিনোফার্মের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিনের পক্ষে সমঝোতা সই করেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।
বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংযান বলেন, সিনোফার্ম তিন বিলিয়নেরও বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেছে। সিনোফার্মের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত চীনের প্রথম টিকা। সিনোফার্ম বিশ্বের ৮৭টি দেশে টিকা পাঠিয়েছে। ৬০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা সিনোফার্মের টিকা গ্রহণ করেছেন। এই টিকা করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কার্যকর।
তিনি আরও বলেন, ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশে করোনা পরিস্থিতি সামলানো একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সেলক্ষ্যে সিনোফার্ম ১ কোটি ৩০ লাখের মতো টিকা বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে এবং আরও ৯০ লাখ ডোজ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। সিনোফার্ম বাংলাদেশকে আরও ৬ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। একই সময়ে আমরা ইনসেপ্টার সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি, যেখানে স্থানীয়ভাবে আধা প্রস্তুত করা উপাদান থেকে মূল টিকা প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা হবে। চুক্তি সইয়ের পর বাংলাদেশে মাসে ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত এবং সরবরাহ করবে।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির বলেন, এই চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে এক নতুন দ্বার উন্মুক্ত হলো। আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করতে পারবো। কারণ এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে এবং উৎপাদনের পর সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে। তবে, আমরা খুব শিগগিরই উৎপাদনে যাবো বলে আশাবাদী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীন থেকে আমরা বাল্ক নিয়ে আসবো। হয়তো একটু সময় লাগবে কিন্তু আমরা টিকা তৈরি করবো এবং বিদেশেও রপ্তানি করবো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকার বিদেশ থেকে অনেক টাকা দিয়ে টিকা কিনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি বিনামূল্যে জনগণকে দেয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রমুখ।
এছাড়া চীনের বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান এফেয়ার্স বিভাগের কাউন্সেলর জিরং, সিনোফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফু কুয়াং, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামানসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।