নারায়ণগঞ্জে শীতের সকালে ঘুম থেকে ওঠা নিয়ে বিতর্কের জেরে হেলপার আকাশকে (২১) গলাটিপে হত্যা করে মহাসড়কের পাশে মরদেহ ফেলে পালিয়ে গেছেন ট্রাকচালক।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের মিডিয়া উইং হাফিজুর রহমান।
শুরুতে পুরো ঘটনাটি ক্লুলেস থাকলেও পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে প্রথমে পরিচয় এবং পরে উদঘাটন হলো হত্যাকাণ্ডের কারণ। ছদ্মবেশে গ্রেফতার করা হয় সেই চালক আরিফুর রহমান টিপুকে (৩০)।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের মিডিয়া উইং হাফিজুর রহমান বলেন, ১৬ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দর উপজেলার জাঙ্গাল এলাকা থেকে আকাশের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার সুজানগর এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় ছিলেন ট্রাকের খণ্ডকালীন হেলপার।
হত্যাকাণ্ডের পর আকাশের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কখনো চালক, আবার কখনো হেলপার বা ব্যবসায়ী পরিচয়ে ছদ্মবেশে খুঁজতে থাকেন সেই চালককে। চালকের নাম পাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পাওয়া যায় তার ঠিকানা। চাল ব্যবসায়ী সেজে কাঙ্ক্ষিত সেই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সময় অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি চলে আসে ট্রাকসহ চালক। পরে গ্রেফতার করা হয় টিপুকে।
তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করেন যে, তিনিই খুন করেছেন আকাশকে। আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি আদালতে ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়ে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন ট্রাকচালক আরিফুর রহমান টিপু।
স্বীকারোক্তিতে টিপু বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে তিনি ও আকাশ গাঁজা সেবন করেন। তাদের ট্রাকে ছিল পুরাতন বই ও কাগজ, যা রাজধানীর মাতুয়াইলে পৌঁছে দিতে হবে। কুমিল্লা থেকে রওনা হয়ে শুক্রবার রাতে তারা শিমরাইল স্ট্যান্ডে পৌঁছান।
তিনি আরও বলেন, সেখানে রাতে থেকে পরদিন ১৪ জানুয়ারি ভোরে আকাশকে ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে থাকা মালামাল আনলোড করার নির্দেশ দেন টিপু। কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানান আকাশ। এতে ট্রাকচালক টিপু তাকে গালিগালাজ করেন। উত্তরে আকাশও গালি দিলে টিপু তার গলা চেপে ধরেন। ট্রাকের সিটেই হত্যা করা হয় তাকে।
স্বীকারোক্তিতে তিনি আরও জানান, হত্যার পর ট্রাক নিয়ে মাতুয়াইলে পণ্য খালাস করে পুনরায় কুমিল্লার দিকে রওনা দেন টিপু। পথে জুমার নামাজের আগে মহাসড়কে আকাশের মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান তিনি।