নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেছেন, অনেকেই ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে অবগত নয়। এজন্য এসি রুমে বসে কেবল আলোচনা করলে হবে না। সকলের মাঝে গিয়ে সচেতনা মূলক সভা ও প্রচার-প্রচারনা চালাতে হবে। নিয়মিত পরিকল্পনা মাফিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন আগে ছিল না, তখন প্রয়োজন মনে করা হয়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে একটা উন্নত বাংলাদেশ। যেখানে সেবা গ্রহণে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয় না। ব্যবসায়ীরা ভালো কিন্তু এরমধ্যে কোন খারাপ নাই তা বলা যাবে না। বহু গুদাম সিলগালা করেছি। বহু মালামাল নিয়ে উম্মুক্ত বাজারে বিক্রি করেছি।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে দেশে আইন ফাঁকি দেয়ার সুযোগ আছে, সে দেশে জীবনেও আইন প্রয়োগ করে কিছুই করা যাবে না। যেমন অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে আপনি আজকে অভিযান করেছেন। আগামী এক মাসে আর আসবেন না তাহলে সেই ব্যক্তি আবার ভেজাল করবে। আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে ওই ব্যক্তি যদি একশত ভাগের একভাগও অন্যায় করে তাকে স্টিমের মধ্যে ধরা খাইতে হবে। তাহলেই সকল অপকর্ম নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এই জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবসায়ে ব্যাপক প্রতারণার কথা শোনা যাচ্ছে। ইভালীর মতো অনেক প্রতিষ্ঠান চমৎকার চমৎকার বিজ্ঞাপন দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যুব সমাজ কি করলো অনলাইনে অডার দিচ্ছে। দুই-চার-পাঁচজনকে প্রডাক্ট দিয়ে তারা বিশ্বস্থতা অর্জন করে। এরপর শুরু হয় প্রতারণা। তাহলে আমরা কোথায় আছি। এই যে প্রতারণার কথা বলা হচ্ছে আমরা সব সময় বলি প্রশাসন আছে, প্রশাসনে জেলা প্রশাসকও আছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের হ্যান্ডস কারা? আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন তারা। জেলা প্রশাসক একটা প্রতিষ্ঠান। আজকে আপনাদের নিয়ে মিটিং করছি আপনারা প্রত্যেকেই এই ভূমিকাগুলো পালন করবেন। তবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই ডিজিটাল প্রতারণা থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনা বৃদ্ধির।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে বাজারে একটা ঔষুধের দোকান তৈরী হয়ে গেলো। ওই এলাকায় তো মেম্বার, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেয়র সবাই তো আছে। তারা সরকারের বেতন নেয় না। আপনি একটা এসোসিয়েশনের লিড দেন, আপনার চোখের সামনে এই ঘটনানাটা ঘটে না। আমরা কি? আমরা এতো সহায় জাতি সব সহ্য করি। আর অপেক্ষা করি কবে সেই অচিন পাখি আসবে তিনি কবে হাক দিবেন তখন আমরা কাজে নামবো। কেন আমরা সবাই মিলে কাজ করি না। এক সাথে যদি কাজ করি ব্যবসায়ি কয়জন আর ভোক্তা কয়জন।
তিনি আরও বলেন, পণ্য বলতে কি শুধু চাল, ডাল, গরুর মাংস? আপনি মোবাইলে রিচার্জ করছেন, এটা পন্য না?
সভার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে আমরা খাদ্যে ভেজাল সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। যখন ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ দৌলা স্যার অভিযান চালিয়ে প্রমান করে দিলেন, ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব। এবং কিভাবে খাদ্যে ভেজাল করা হচ্ছে। তিনিই বুঝিয়ে দিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কেনা যাবে না। বেশিদিন আগের কথা নয়, আমরা এই বিষয়ে সচেতন হয়েছি।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, নিতাইগঞ্জ পাইকারী ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ী শংকর সাহা, নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক শাহজাহান খান, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সদস্য বিল্লাল হোসাইন রবিন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সোহেল আক্তার প্রমুখ।
এছাড়া আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- ক্যাবের প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী,মসজিদের ইমাম, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার বিশিষ্টজন।
আলোচনার সভার আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে ভোক্তা দিবস উপলক্ষে বর্নাঢ্য র্যালি ও ট্রাকশো বের করা হয়।