বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
হোয়াটসঅ্যাপে নতুন সুবিধা, স্ক্যান করা যাবে নথিপত্রও কড়ই গাছের ভেতরে জ্বলছে আগুন, নেভাতে ব্যর্থ ফায়ার সার্ভিস ৭ গোলের থ্রিলার ম্যাচে আল হিলালের ইতিহাস, ম্যানসিটির বিদায় উপবাস ছিলেন, তারপরেও শেফালীর শরীরে কীসের ইনজেকশন? আমরা একদলীয় দেশের বাসিন্দা, এখন সময় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের: মাস্ক জুলাইকে সবার গণজাগরণ ও ঐক্যের মাসে পরিণত করুন : প্রধান উপদেষ্টা পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়লেন এক সন্তানের জননী বক্তাবলী রাজাপুর ঘাট ইজারার পুনঃ দরপত্র বুধবার উম্মুক্ত হবে এখন থেকেই জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে : গিয়াসউদ্দিন ফতুল্লায় এক পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষে বন্ধ হলো ৮ কারখানা

সমালোচনা ঢাকতে বিক্রিই বন্ধ

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.২৭ এএম
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জন্য সরকার দুটি সংস্থার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে কিছু পণ্য বিক্রি করে থাকে। এর মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে তেল, চিনি, ডাল বিক্রি করে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এবং রোজার সময় পেঁয়াজ, আলু, খেজুর এবং ছোলাও বিক্রি করে সংস্থাটি। আর খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করে সরকার।

সংস্থা দুটি যখন ট্রাকে করে এসব পণ্য বিক্রি করে তখন ট্রাকের পেছনে শত শত মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এতে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি পড়ে যায় এবং অনেক ক্রেতাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য কেনার সময় এই হুড়োহুড়ি এড়াতেই ট্রাকসেল বন্ধ করেছে সরকার।

অবশ্য টিসিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, হুড়োহুড়ির কারণে ট্রাকসেল বন্ধ করা হয়নি, ট্রাকসেল বন্ধ করা হয়েছে মূলত দুটি কারণে। প্রথমত কয়েকটি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য ট্রাকসেল চালু করা হয়েছিল। সে সময়সীমা পার হওয়ায় বন্ধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সামনে রমজান মাস থাকায় টিসিবি এখন রমজানের পণ্য মজুদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। একই সঙ্গে ট্রাকসেল চালু রাখলে রমজানের পণ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটতে পারে বিধায় বন্ধ করা হয়েছে ট্রাকসেল। সময়ের আলোকে এমন তথ্য জানান টিসিবি যুগ্ম পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।
জানা যায়, গত বছরের পুরো সময় দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ছিল।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত বছর টানা ৯ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে চাল, পেঁয়াজ, আলু, মুরগি, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল ও চাল বিক্রির কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল টিসিবি। এই কার্যক্রমের আওতায়, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ লিটার ভোজ্য তেল প্রতিলিটার ১০০ টাকায়, ২ কেজি মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ৫ কেজি চাল প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারতেন। এতে একজন গ্রাহকের অন্তত ৩৫০ টাকা বা তার বেশি অর্থ সাশ্রয় হয়। অথচ গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে হুট করেই ট্রাকসেল বন্ধ করে দেয় টিসিবি। এর ফলে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড না থাকায় প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২৮ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে ট্রাকসেলের মাধ্যমে পণ্য কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

টিসিবির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত অক্টোবরে তারা প্রথমে এক মাসের জন্য (শুধু নভেম্বর) সাময়িকভাবে এ কর্মসূচি (ট্রাকসেল) শুরু করেছিলেন। তবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালানো হয়। এরপর ট্রাকসেল চালু রাখার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না আসায় বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নভেম্বর-ডিসেম্বর এই দুই মাসে যখন টিসিবির পণ্য দেওয়া হয় ট্রাকে করে তখন প্রতিটি ট্রাকের পেছনে ক্রেতার লম্বা লাইন পড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। পণ্য না পাওয়ায় অনেক ক্রেতা কান্না করতে করতে ঘরে ফিরেছে। এতে বিভিন্ন মহলে টিসিবি নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়। একই রকম পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল পলাতক শেখ হাসিনা সরকারের আমলেও। সে সময় টিসিবির পণ্য নিয়ে হুলুস্থূল কারবার হয়েছিল। এতে তখনও সমালোচনার পক্ষে পড়েছিল টিসিবি এবং সমালোচনা এড়াতে তখনও টিসিবির ট্রাকসেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। একই রকম অবস্থা এখনও দেখা গেল।

এদিকে টিসিবির মতোই গত অক্টোবরে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রির যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদফতর, এটিও সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশে টিসিবির এক কোটি পরিবার কার্ডের মধ্যে ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
তাহলে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ কীভাবে পণ্য কিনবে এই উচ্চমূল্যের বাজারে। এ প্রশ্ন রেখে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ‘এভাবে ট্রাকসেল কর্মসূচি বন্ধ করা উচিত হয়নি। বাতিল হওয়া টিসিবির ৪৩ লাখ পরিবার কার্ডের সমপরিমাণ পণ্য আপাতত ওএমএস বা ট্রাকসেলের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা যেত, তাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেতেন। একদিকে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি, টিসিবির ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল, ট্রাকসেল বন্ধের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করবে। তাই সরকারের এসব জনবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করে দ্রুত আবার চালু করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, ‘টিসিবির ট্রাকের পেছনে পণ্য নিতে সাধারণ মানুষের হুড়োহুড়ি লেগে যেত বলে এভাবে বন্ধ করা ঠিক হয়নি। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা তো কোনো সমাধান না। অন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারত। তবে আমার মনে হয়, সাধারণ মানুষের দিকটি বিবেচনা করে দ্রুত আবার চালু করা দরকার। আগের সরকার যে পথে হেঁটেছে, এ সরকারও একই পথে হাঁটছে। ৪৩ লাখ বাতিল করেছে, তা হলে ট্রাকসেল বাতিল করল কেন। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমেও এখন দেওয়া বন্ধ রয়েছে। অবশ্যই ট্রাকসেল চালু করা করতে হবে। তবে কোথাও কোনো সমস্যা হলে বা বিশৃঙ্খলা হলে সেটার সমাধান বের করতে হবে। সেটি না করে একেবারে বাতিল করে দেওয়া ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারত। তদারকির মধ্যে রাখতে হবে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort