নিজস্ব প্রতিনিধি: বরিশালে গতকাল বুধবার (৩১জুলাই) ‘বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ২০ সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জনাতে গিয়ে বার্তা সংস্থা আইএনবি নিউজ এর চীফ রিপোর্টার লেখক ও সাংবাদিক এমডি বাবুল ভূঁইয়া তার ভেরিফাই ফোইসবুক পোস্টে লিখেন সব দোষ সাংবাদিকদের! সব অপরাধ গনমাধ্যমকর্মীদের! দোষতো হবেই। অপরাধতো হবেই। এখানে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। যেখানে সারাদেশ জুড়ে চলছে সহিংস আর গণহত্যার মতো ঘটনা সেখানে সাংবাদিকরা বাদ যাবে কেন? রাস্ট্রযন্ত্রসহ সবার রক্তচক্ষুর হুমকির মুখে বরাবরই পরতে হয় সাংবাদিক সমাজকে।
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আজ বলতে হয়, আমরা নস্ট জাতি হিসেবে দিনদিন পরিনত হচ্ছি। যখন কোন সংবাদকর্মী বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে সেই সংবাদটুকু হয়তো কারো পক্ষে চলে যায় আবার কারো বিপক্ষে চলে যায়। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দোষ বা অপরাধ।
যখন আমাদের কোন লেখা বা সংবাদ সরকারের বিপক্ষে চলে যায় তখন তাদের রক্তচক্ষুর ছোবলে পরতে হয়। আবার যদি সেটা জনতা কিংবা বিরোধীদলের বিপক্ষে চলে যায় সেখানেও সংবাদকর্মীদের রক্তচক্ষুর রোষানলে পড়তে হয়। যতদোষ সংবাদকর্মীদের! আর বাকী সবাই ফকফকে সাদা ….। কথায় বলে ধোয়া তুলসি পাতা।
গণমাধ্যমকর্মীদের আজ কেউ সহ্য করতে পারেনা। এর অনেক কারন রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি সময়ের দু’একটি ঘটনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছি। যেখানে বেনজীর আহাম্মাদ, মতিউর রহমান, আবেদ আলীদের মতো লোকদের গোপন দুর্নীতির সংবাদ সাংবাদিকরা প্রকাশ করে সেখানেতো তাদের কাছে সাংবাদিকরা অপরাধী বা দোষী হবেই।
যখন কোন প্রশাসনিক দপ্তরের কন্সটেবল থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির মুখোশ উম্মোচন, সরকারের গঠনমূলক দুর্নীতির তথ্য ফাঁস, বিরোধীদলের দুর্নীতি বা সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডের তথ্য বা চিত্র প্রকাশ, যখন কোন জঙ্গী বা রাস্ট্রদোহিতার সাথে জড়িতদের তথ্যবহুল সংবাদপ্রকাশসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষমতারদের অন্যায় কর্মকাণ্ড গুলো প্রকাশ করেন তখন সাংবাদিকরা অপরাধীই বটে।
আবার শোবিজ অঙ্গনের কোন শিল্পী যদি তাদের কোন এহেন অপকর্মের কথা সাংবাদিক সমাজ দেশ-জাতির কাছে তোলে ধরেন তখন তাদের চোখেও সংবাদকর্মী বা সাংবাদিকরা অপরাধীই বটে।আমাদের পেশাটাই মনে হয় অপরাধের পেশা। আমি লজ্জিত …।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডকে অপরাধীর চোখে দেখে নির্লজ্জের মতো যারা রাস্তায় জনসম্মুখে সাংবাদিকদের লাঠিপেটা করেন আমি তাদের নিন্দা ও দীক্ষা জানাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন বরিশালের সাংবাদিকরা। কি দোষ ছিল সাংবাদিকদের? তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিত্র বা ফুটেজ সংরক্ষণ করছেন এটাই কি তাদের অপরাধ? ছিঃছিঃ…..। দীক্ষা ও নিন্দা জানাই পুলেশের এহেন কর্মকাণ্ডকে।
আমার সহযোদ্ধা ভাইগন গুরুতর আহত হয়েছেন অথচ কারোর কোন সহমর্মিতা নেই। দৈনিক যুগান্তরের ফটোসাংবাদিক শামীম আহম্মেদ, এনটিভির ক্যামেরাপারসন গোবিন্দ সাহা, বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি এসএলটি তুহিন ও যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন হৃদয় চন্দ্র শীল সহ আরো অনেকই আহত হয়েছেন।
আহত সাংবাদিকরা বলেন, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) তানভীর আরাফাত সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করেন।
হামলায় আহত দৈনিক যুগান্তরের ফটোসাংবাদিক শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জের সময়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখন আমার হাতে ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও আমাকে লাঠিপেটা করে। আজকের ঘটনায় পুলিশ মোটেও পেশাদার আচরণ করেনি। অপেশাদার ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি এসএলটি তুহিন বলেন, ‘আমরা অনেক সাংবাদিক একসঙ্গেই ছিলাম। শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করার সময় আমাদেরও পেটানো শুরু করে। আমি পায়ে আঘাত পেয়েছি। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অন্য দুজন হলেন এনটিভির ক্যামেরাপারসন গোবিন্দ সাহা ও যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন হৃদয় চন্দ্র শীল।
স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিক পাভেল বলেছেন, ‘পুলিশ গণহারে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। উনার গায়েও লাঠির আঘাত পড়েছে। স্থানীয় ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) তানভীর আরাফাত এর বিরুদ্ধের অভিযোগ সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।