বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দখল-দূষণে বিপর্যস্ত রাজগঞ্জ খাল উদ্ধার অভিযান, খুশি স্থানীয়রা ১৭ বছর আগের বিকিনি বিতর্কের ব্যাখ্যা দিলেন নয়নতারা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশের ব্যাটিং, হার টানা পাঁচ টেস্টে ষড়যন্ত্র চলছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে বললেন তারেক রহমান বিক্ষোভ-সংঘর্ষে অস্থিরতা, শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলো হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি, ২ লাখ টাকা ও স্বর্নালংকার লুট ‘নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নির্বাচন-২০২৫’ এর প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র দাখিল বন্দরে ২০ কেঁজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ৩

সন্তানের মাদক সেবনের হাতিয়ার অসহায় এক মা

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩.৫৪ এএম
  • ২৪৫ বার পড়া হয়েছে

রুদ্রবার্তা২৪.নেট: সাবরা খাতুন। বয়সের ভারে নজ্যু। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে দেহে। কত বয়স তার নিজেও জানেন না। তবে তার ধারনা বয়স একশ’র কাছাকাছি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই বৃদ্ধার এখন ছেলে-সন্তান, নানী-নাততির সাথে শুয়ে-বসে দিন পার করার কথা। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ভাগ্য তাকে সেই সুখ দেয়নি। বরং আদরের সন্তান জাবেদ নেশার টাকার জন্য তাকে পূজি করেছে। ভিক্ষুকের ভেষে মাকে রাস্তার পাশে ফুটপাতে শুইয়ে দিয়ে টাকা তুলছে সে।
আর সেই টাকায় মাদক গিলছে জাবেদ। অথচ ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেছে যেই সন্তানকে সেই সন্তান আজ প্রিয়জননীকে ভিক্ষার হাতিয়ার বানিয়েছেন। হায়রে নিষ্ঠুরতা। তবে শুধু জাবেদই নয়, জাবেদের মত নারায়ণগঞ্জ শহরের আরও অনেকেই অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ভিক্ষাবৃত্তি করে মাদকের টাকা সংগ্রহ করছে। আর তাদের কারণে সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত ভিক্ষুকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের সুধীজন পাঠাগার ভবনের নিচে ফুটপাতে গামছা পেতে মাকে নিজের কোলে শুইয়ে বসে আছেন জাবেদ। মা ছেলের মমতাময়ী এ দৃশ্য দেখে পথের সকলেই মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন। মা-ছেলের অসহায় পরিস্থিতি দেখে পথচারীরা তাদের সাধ্যমত অর্থ দিয়ে সহযেগিতা করে। অনেকেই কিছু বাড়তি টাকাও দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে মিনিট দশেকের মধ্যেই দেখা যায় গামছা টাকায় ভরে গেছে। কয়েক শত টাকা হলেই, টাকা পকেটে গুঁেজ ভিক্ষার থালা খালি করে বসে থাকে।
ভিক্ষা বৃত্তি নতুন কিছু নয়। সুস্থ্য কি অসুস্থ্য হাত পাতলেই টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু অসহাত্বের সুযোগ দেখিয়ে অনেকেই এই পেশায় নেমেছেন। ফলে প্রায় সময় প্রকৃত ভিক্ষুকরা দান খয়রাত থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু চোখের সামনে মা-ছেলের এমন মমতা ও অসহায়ত্ব দেখে পথচারী বিষয়টি এড়িয়ে যান না। একটু বেশিই দেয়ার চেষ্টা করেন। তাই মাদকের চাহিদা মেটাতে মাকে ব্যবহার করছেন তিনি। আর মানুষের এই সহানুভুতিকে পূজি করে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
শহরের ব্যস্ততম স্থানে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন জাবেদ। দিনব্যাপী ভিক্ষা করে, রাতে চলে জুয়ার আসরসহ মাদক সেবন।
সাবরা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বাকি সব ছেলে মেয়ে নারায়ণগঞ্জেই থাকে কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্ভী নয়। তবে জাবেদ ভিক্ষা করার শর্তে তাকে কাছে রাখে। অন্যান্য সন্তানেরা ঠিকভাবে তার ভরণপোষণ দিতে পারে না বলে বাধ্য হয়েই জাবেদের এই শর্ত মেনে নিয়েছেন।
এদিকে জাবেদের ভাষ্যমতে, ছয় ভাই-বোন রয়েছে তার। তারা কেউ তার মায়ের দেখভাল করতে চায় না। এ কারণে তিনি ভিক্ষা করে মায়ের এবং তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। বাড়ি ভাড়ার টাকা নেই বিধায় রাত্রি যাপন করেন ফুটপাতে, দোকানের ছাউনির নিচে। কাজ না করার পিছনের কারণ হিসেবে নিজের পায়ের ক্ষত দেখিয়ে বলেন, আমার পায়ে সমস্যা। তবে পায়ের সমস্যা জানালেও কোন কিছুতে ভর না করে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করেন জাবেদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাবেদের মতো একাধিক মাদকসেবী তাদের নিজেদের শরীরে নিজেরা ক্ষত তৈরী করেন। অসুস্থতার সহানুভূতি দেখিয়ে ভিক্ষা করে তারা। মেডিসিন ব্যবহার করে ক্ষত স্থান তাজা রাখে। যেন শুকিয়ে না পড়ে এ জন্য একটা মেডিসিন ব্যবহার করে তারা। কারণ ক্ষত স্থান শুকিয়ে গেলে তাদের প্রতি সহানুভূতিও হ্রাস পাবে মানুষের। দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রতারনার মাধ্যমে পথচারীদের কাছ থেকে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জাবেদ ও সাবরা খাতুনের পাশে ফুটপাতে বসেই পণ্য বিক্রি করেন হকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মমিন। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ফুটপাতের বিভিন্ন জায়গায় বসে টাকা উঠায়। মা কে সাথে রাখে টাকা বেশি পাওয়ার জন্য। সারাদিনে অনেক টাকা কামায়। সামান্য কিছু মারে দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে মাদক খায়। এই মহিলার সাথে আমি কথাও বলছি, ভিক্ষা না করলে সেইদিন খাবার দেয় না। অথচ যেইদিন ভিক্ষা করে হাজার টাকার কম হইবো না ইনকাম করে। সাধারণ ভিক্ষুকদের এতো ইনকাম নাই, যত বেশি তাদের হয়।
অভিনব কৌশল ব্যবহার করে মাদকসেবীদের ভিক্ষাবৃত্তি প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো.আমীর খসরু বলেন, সমাজে এই শ্রেনীর মাদকসেবীদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা মাত্রাতিরিক্ত মাদক গ্রহণ করে। মাদকসেবনের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে তারা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন করে পড়ে থাকে। সমাজসেবা সংস্থা ও যেসব এনজিও মাদকসেবীদের নিয়ে কাজ করে, তাদের উচিত এসব মাদক পুর্নবাসন সহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করলেই এই সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পুলিশের একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। মাদকের সাপ্লাই রোধে আমাদের প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। মাদকের সাপ্লাই এবং মাদক বিক্রির যে ধারা রয়েছে সেটা বন্ধ করা সম্ভব হলে, মাদক বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort