নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দান করা অধিক মূল্যের জমির সাথে কম মূল্যের ব্যক্তি মালিকানার জমি বিনিময় (এওয়াজ) দলিল করা হয়েছে।
অনিয়মের মাধ্যমে এই কার্যক্রম সম্পাদন করেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিযুক্ত তানভীর আহমেদ।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে একেএম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ অস্বীকার করেন সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু। ক্রীড়া সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জমি বিনিময় দলিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় দু’টি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই নগরীর ইসদাইর এলাকায় অবস্থিত ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামের প্রায় সাড়ে আট শতাংশ জমি সাইদুল আলম নামে এক ব্যক্তির সাড়ে ১২ শতাংশ জমির সাথে বিনিময় দলিল করা হয়েছে।
এই জমি তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ক্রীড়া সংস্থাকে দান করেছিল। ক্রীড়া সংস্থার জমির মূল্য বিনিময় করা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ক্রীড়া সংস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে জমি বিনিময় দলিল করে ক্রীড়া সংস্থার ওই জমির মালিক হতে চেয়েছেন তানভীর আহমেদ টিটু। ওই জমির বর্তমান মালিক তার জমি ব্যবসার সিন্ডিকেট পার্টনার এস এম রানা।
জমির বিনিময় দলিল করা প্রসঙ্গে সিদ্ধান্তের যে কথা বলা হয়েছে ২০১৬ সালে ওইদিন বার্ষিক সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি। সভার সভাপতি তথা জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতিরও স্বাক্ষর ছিল না। তিনিসহ আরও ২৮ জনের স্বাক্ষর নেই সাধারণ সভার উপস্থিতি তালিকায়। অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ সভার স্বাক্ষর অনেক পরে নেওয়া হয়েছে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় উদ্দেশ্যমূলক খবর পরিবেশন করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চাচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন সাহেব ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়নের জন্যে এই ভূমিটি দান করেন।
২০১১ সালে আমি ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব নেবার পর থেকে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম করার কাজ শুরু করি। পুরাতন মাঠটিকে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম করার জন্য কিছু জায়গার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
তখন আমরা আমাদের কমিটি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে, জায়গার ব্যবস্থার জন্য ডিসির কাছে আবেদন করবো। তখন আকসির (কে ইউ আকসির) চাচা প্রস্তাব রাখেন যে, কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করে দেয়ার জন্য। তখন অর্থ না থাকায় সেই জমিটুকু অধিগ্রহণ করতে পারেনি।
তখন ২০১৬ সালে আমাদের এজিএমে (বার্ষিক সাধারণ সভা) এওয়াজ বদলের প্রস্তাব রাখি। তখন সবাই সে বিষয়ে সম্মতি জানায়। ক্রীড়া সংস্থার খেলার মাঠ উন্নয়নে সর্বোচ্চ সম্ভাব্যতা যাচাই করেই ভূমির এওয়াজ বদলের কাজটি অধিকতর সুবিধা নিয়েই সম্পন্ন করা হয়েছে।’
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মিথ্যা দাবি করে পাল্টা অভিযোগ করে টিটু বলেন, ‘পত্রিকায় বানোয়াট কথা লিখেছে। ওই এজিএম’র নিউজও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আমাকে ওই জমির আসল ক্রেতা বলা হয়েছে।
কোনো প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের কথা লেখার প্রতিবাদ জানাই। পত্রিকায় আমার ছবি ব্যবহার করে আমার নামের সাথে শ্যালক ব্যবহার করেছে। শামীম ওসমান আমার বোনের স্বামী।
আমি শামীম ওসমানের শ্যালক বলে যদি এমনটা লেখা হয়ে থাকে তাহলে আমি গর্ব করে বলতে চাই, যদি সে কারণে আমাকে বির্তকিত করার চেষ্টা করেন তাহলে আমি সারাজীবন বির্তকিত হতে রাজি আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি কে ইউ আকসির, খবির আহমেদ, এ জেড এম ইসমাইল বাবুল, ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু, যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম নাসির, মোস্তফা কাওছার, সদস্য রবিউল হোসেন, মো. আসলাম, ফিরোজ মাহমুদ সামা, এসএম আরিফ মিহির, আঞ্জুমান আরা আকসির, রোকসানা খবির প্রমুখ।