শ্রীলংকায় গোতাবায়া রাজাপাকসের খাস লোকদের নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। শুক্রবার শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন রাজাপাকসের দল শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) নেতা দিনেশ গুনাবর্ধনে।
একইদিন ১৭ জন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনই ক্ষমতাসীন দল শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) সংসদ-সদস্য। এছাড়া প্রধান বিরোধী দল সমজি জনা বালাওয়েগার (এসজেবি) দুজন, ইলম পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (ইপিডি) একজন, শ্রীলংকা প্রিডম পার্টির একজন এবং শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের একজন। গুনাবর্ধনের শপথ অনুষ্ঠানে রনিল বিক্রমাসিংহে ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও আইনপ্রণেতা ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গুনাবর্ধনেকে গণপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রাদেশিক কাউন্সিল ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৭৩ বছর বয়সি গুনাবর্ধনে কলম্বোর রয়্যাল কলেজে রনিল বিক্রমাসিংহের সহপাঠী ছিলেন। রনিলের মতো তাকেও রাজাপাকসে পরিবারের অনুগত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গুনাবর্ধনের জন্ম ১৯৪৯ সালে। তার পুরো নাম দিনেশ চন্দ্র রূপসিংহে গুনাবর্ধনে।
অপর মন্ত্রীরা হলেন-ইলম পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (ইপিডি) ডগলাস দেবানন্দ (মৎস্যসম্পদ), এসএলপিপির সুশীল প্রেমজয়ন্ত (শিক্ষা), শ্রীলংকা প্রিডম পার্টির বন্দুলা গুনাবর্ধনে (পরিবহণ, মহাসড়ক ও গণমাধ্যম), এসএলপিপির কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা (স্বাস্থ্য ও পানি সরবরাহ), এসএলপিপির মাহিন্দা অমরাবিরা (কৃষি, বন্যপ্রাণী ও বন সংরক্ষণ), এসএলপিপির ড. বিজয়াদাসা রাজাপাকসে (বিচার, কারাগার ও সাংবিধানিক সংস্কার), এসজেবির হারিন ফার্নান্দো (পর্যটন ও ভূমি), এসএলপিপির রমেশ পাথিরানা (বৃক্ষরোপণ ও শিল্প), এসএলপিপির প্রসন্ন রানাতুঙ্গা (নগর উন্নয়ন ও আবাসন), এসএলপিপির আলী সাবরি (পররাষ্ট্র), এসএলপিপির বিদুর বিক্রমনায়েকে (বুদ্ধশাসন, ধর্মীয় ও সংস্কৃতি) এসএলপিপির কাঞ্চনা উইজেসেকেরা (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি) শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেসের নাসির আহমেদ (পরিবেশ) এসএলপিপির রোশন রণসিংহ (ক্রীড়া, যুববিষয়ক ও সেচ), এসজেবির মনুষা নানায়াক্কারা (শ্রম ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান), এসএলপিপির তিরান আলেস (জননিরাপত্তা) এবং এসএলপিপির নলিন ফার্নান্দো বাণিজ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এর আগে চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে সৃষ্ট রাজনৈতিক টানাপোড়েনে একযোগে পদত্যাগ করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির মন্ত্রিসভার সব সদস্য। ৩ এপ্রিল লংকান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যই পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগকারী মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নামাল রাজাপাকসেও।
এর পরের দিনই নতুন চারজনকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। অর্থমন্ত্রী হিসাবে বাসিল রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হন আলি সাবরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পান জিএল পেইরিস। এছাড়া দীনেশ গুনবর্ধনে শিক্ষামন্ত্রী ও জনস্টন ফার্নান্দো মহাসড়কমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন।
সেই সময়ও পদত্যাগ করেননি প্রেসিডেন্টের ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা। তবে আন্দোলন ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠায় ৯ মে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এরপর ১২ মে শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ তাতেও কমেনি। গণআন্দোলনের মুখে ১৩ জুলাই রাতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। প্রথমে মালদ্বীপ, এরপর সিঙ্গাপুরে গিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। পরে রনিলকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। বুধবার পার্লামেন্টের ভোটে তিনিই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।