ভুসি আর সবুজ ঘাস খেয়ে প্রান্তিক খামারে বড় হওয়া ষাঁড় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৯ ফুটের বেশি, উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, ওজন ২৪ মণ।
ষাঁড়টির মালিক হলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্বকোটাপাড়া এলাকার মো. মজিবুর রহমান। গারো কালো বর্ণের ষাঁড়টির শরীরের আকারে সন্তুষ্ট হয়ে ভালোবেসে মালিক নাম দিয়েছেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিক্রির জন্য মালিক মজিবুর রহমান ষাঁড়টির দাম হাঁকেছেন ৮ লাখ টাকা। গরুটি দেখতে প্রতিদিন মানুষের ভিড় জমছে তার বাড়িতে। এমনকি স্পেন থেকে ভিডিও কলে দেখে ষাঁড়টি পছন্দ করে ৮ লাখ দাম বলেছেন এক ব্যক্তি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের পূর্বকোটাপাড়া গ্রামে প্রান্তিক এ খামারটির নাম ‘রহমান ডেইরি ফার্ম’। ২০১৪ সালে এর অবকাঠামো তৈরি হলেও ২০১৭ সালে ২০টি গাভি ও ষাঁড় গরু দিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু। এরপর প্রতি বছরই গাভির বাচ্চা প্রজনন হয়। এখন এ খামারটিতে সবসময় ১০০-১২০টি গরু পালন করা হয়। ২০১৯ সালে বিশেষ একটি বীজ থেকে জন্ম নেয় ব্ল্যাক ডায়মন্ড। কোনো ওষুধ ছাড়াই সাড়ে চার বছর লালন পালনের পর মোটা তাজা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখে, রহমান ডেইরি ফার্মে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বাধা ব্ল্যাক ডায়মন্ড।
এছাড়া খামারটিতে ১০০ এর ওপর বকনা বাছুরসহ গাভি ষাঁড় রয়েছে। তার মধ্যে ব্ল্যাক ডায়মন্ডই সবচেয়ে শক্তিশালী ও বড়। ফার্মের গাভি গরুগুলো ১০-১২ কেজি করে দুধ দেয় প্রতিদিন। খামার থেকেই সেই দুধ কিনে নিয়ে যায় এলাকাবাসী ও মিষ্টির দোকানগুলোতে। এছাড়া মজিবুর রহমানের এ খামারের গরু বিক্রি করতে কখনো হাঁটে নিতে হয়নি। খামারে এসেই সবাই পছন্দ করে গরু নিয়ে নিয়ে যায়। গরু বিক্রি করে আয় হওয়া টাকা থেকে স্টাফদের বেতন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এর লাভের অংশ এতিমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খামারের পেছনে অনেক পরিশ্রম করেছেন মজিবুর রহমান। তিনি তার এতিমখানা লিল্লা বোর্ডিংয়ের উন্নয়নের জন্য এই খামারের লাভের অংশ খরচ করেন। তার এই খামার থেকে একটি ষাঁড় বাছুর হয়েছিল তার বয়স সাড়ে চার বছর। ষাঁড়টি ছিপছিপে কালো হওয়ায় আদর করে নাম দেন ব্ল্যাক ডায়মন্ড। দিন দিন এর ওজন বেড়ে ২৪ মণে এসে দাঁড়িয়েছে।
ফার্মের মালিক মজিবুর রহমান বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার একটি লিল্লাহ বোডিং এতিমখানা রয়েছে। আমি ২০১৭ সালে কিছু গরু দিয়ে একটি প্রান্তিক খামার গড়ে তুলি। আমার খামারে প্রায় ১০০ থেকে ১২০টি গরু থাকে। ২০১৯ সালে আমার খামারে একটি ষাঁড় বাছুর জন্ম নেয় । প্রায় সাড়ে চার বছর ঘাস এবং কুটাসহ প্রাকৃতিক সব খাবার খাইয়ে ষাঁড়টি বড় করে তুলেছি। এখন এটির ওজন ৯০০ কেজিরও বেশি। এরই মধ্যে ব্ল্যাক ডায়মন্ডের দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা। আমি চাই এটি আরও বেশি দামে বিক্রি হোক। কারণ এর লাভের অংশ দিয়ে আমি এতিমখানার উন্নয়নে খরচ করতে পারবো। গত সাড়ে চার বছরে ষাঁড়টির পেছনে আমার ছয় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। ঈদ আসতে আসতে আমার গরুটির ওজন আরও বাড়তে পারে। আমি আশা করছি এর দাম আরও বাড়বে।
খামারিদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, খামারে ভালো ও স্বাস্থ্যবান গরু পালন করার জন্য সবুজ ঘাস আর খড়কুটা খাওয়াবেন। বর্ষার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাস প্রয়োজন। তাই একটি জমি কিনে সেই জমিতে ঘাস রোপণ করেই গরুর জন্য পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে যাবেন।
শরীয়তপুরে ভেটেরিনারি সার্জন সুবোধ কুমার দাস বলেন, জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় কোরবানি কেন্দ্র করে যেসব পশু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। সেইসব খামারের গরুর প্রাকৃতিক ভাবে ঘাস খেয়ে মোটা হয় সেগুলোর মধ্যে মজিবুর রহমানের ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’টি সবচেয়ে বড়। শুনেছি গরুটির দাম ৮ লাখ টাকার উপরে হাঁকছে। তাই যারা কোরবানির জন্য বড় ও ফ্রেশ পশু চান, তারা ব্ল্যাক ডায়মন্ড নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, পশু পালন খুব লাভজনক। মাংসও সুস্বাদু। তাই এর চাহিদা খুব বেশি হবে। বিশেষ উন্নত জাতের কয়েকটি পশু পালনের মাধ্যমে যে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। নতুন খামারিদের জন্য বলতে চাই, খামারে গরু মোটা তাজা করতে ও সুস্থ রাখতে সবুজ ঘাসের বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত খাস চাষ করতে পারলে খামার দিয়ে লাভবান হওয়া যাবে।