শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেয়ো না

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২২, ৪.৩১ এএম
  • ৪০৫ বার পড়া হয়েছে

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি থেকেই তো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। নিজেদের নেতৃত্বের জায়গায় গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। তোমরা সেভাবেই নিজেদের আদর্শবান কর্মী হিসাবে গড়ে তুলবে। খেয়াল রাখবে, কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেয়ো না। নিজেকে শক্ত করে সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে। সেভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

 

ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনা সংগঠনটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা হিসাবে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাও তাদের আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে।’

নিজের রাজনৈতিক জীবনে আসা নানা প্রতিবন্ধকতা সাহস ও সততার সঙ্গে মোকাবিলা করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন-বুলেট, বোমা, গোলা অনেক কিছুই তো মোকাবিলা করেছি, কাজেই ও নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু দেশটাকে যেখানে নিয়ে এলাম, এ গতিটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই চাই। চিন্তাটা সেখানেই যে, আবার যেন আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগকে সচেতন থাকতে হবে। আবার যেন কখনো হায়েনার দল এসে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ছাত্রলীগের মূল মন্ত্রই হচ্ছে শিক্ষা। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এ শিক্ষা যে কোনো উপায়ে পয়সা বানানোর শিক্ষা নয়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাটা অন্তর থেকে অনুধাবন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের আরেকটি মূলমন্ত্র হচ্ছে শান্তি। কাজেই ছাত্রলীগকে সেটাও মনে রাখতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। কখনো যেন কোনো ছাত্র বা যুব সমাজ এ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। তিনি বলেন, করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে মানুষকে, ধন-সম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না। মানুষকে যেমন হঠাৎ করে মরতে হয় আবার সম্পদ বানালেও যে সেগুলো কোনো কাজেই লাগে না। করোনা কিন্তু সেই শিক্ষা সবাইকে দিয়ে গেছে। কাজেই অহেতুক অর্থের পেছনে না ছুটে মানুষের জন্য কাজ করা একজন রাজনৈতিক নেতার কাজ। সেটাই মাথায় রাখতে হবে।

উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জাতিকে যদি দারিদ্র্য মুক্ত করতে হয় শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ। সেই অর্থটা কাজে লাগে। শিক্ষিত জাতি ছাড়া কখনো উন্নত জাতি হওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি এবং শিক্ষা বহুমুখী করার ব্যবস্থাও নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যুব সমাজ, তরুণ প্রজন্মকে আমরা বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিচ্ছি যে নিজে চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেদের উদ্যোক্তা হতে হবে। চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তার জন্য যা যা সুযোগ আমরা তা সৃষ্টি করে দিয়েছি।

বিভ্রান্তির পথে না গিয়ে পাঠে মনোনিবেশের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে এখন থেকেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লব আসবে, প্রযুক্তির এ যুগে মানুষের কর্মদক্ষতারও পরিবর্তন ঘটবে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এখন থেকে তৈরি হতে হবে।

একটি মহল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না। কাজেই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি-আদর্শ নিয়ে চললে পরে, আর সৎ পথে চললে পরে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা। তিনি বলেন, কিছু মানুষ সব সময় কোনো একটা প্রভু খুঁজে নিয়ে তাদের পদলেহন করতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোনো আত্মমর্যাদা বোধ নেই। তাদের নিজের প্রতি কোনো আত্মবিশ্বাসও নেই। এদের দিয়ে দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হয় না।

নানা ষড়যন্ত্রের পরেও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পালটে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না বরং সমীহ করে চলতে পারে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কিন্তু ২০৪১ সাল পর্যন্ত তো আমি থাকব না, আর বাঁচবও না। কিন্তু একটা কাঠামো দিয়ে গেলাম, একটি পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম। যেমন-২০১০ থেকে ২০২০ দিয়েছিলাম। তারই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেছি। ঠিক একইসঙ্গে ২০৪১-এ আমাদের যে লক্ষ্য সেটা মাথায় রেখে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেছি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এ ছাত্ররাই শিক্ষিত জাতি হিসাবে গড়ে উঠবে। কাজেই তাদেরই সেভাবে তৈরি হতে হবে। ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসাবে নিজেদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০৭১ সাল স্বাধীনতার শতবর্ষ উদ্যাপন হবে। আমরা যেমন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপন করলাম, শতবর্ষ যারা উদ্যাপন করবে- সেই প্রজন্ম তৈরি করতে হবে এখন থেকেই।

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহিদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘মাতৃভূমি কর্নার’ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল রাহিয়ান খান জয়। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান এমপিও বক্তব্য দেন। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে- অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইকবালুর রহিম, অসীম কুমার উকিল, অজয় কর খোকন, একেএম এনামুল হক শামীম, লিয়াকত শিকদার, বাহাদুর বেপারী, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort