নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চাদপুর জোনের অর্ধ বার্ষিক পর্যালোচনা সভা জানুয়ারি-জুন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) জেলা কার্যালয় নারায়ণগঞ্জ ও সহযোগিতায় নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থত ছিলেন বিসিকের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব (গ্রেড-১) মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিসিকের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, যে সব ফ্যাক্টরি লবণে আয়োডিন পরিমিত দেন না তাদের সাবধান করে দেন, ভবিষ্যতে এভাবে আয়োডিন পরিমানের থেকে কম দিলে নিবন্ধন বাতিল করে দেয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি যে সব ফ্যাক্টরি পরিমিত পরিমানে আয়োডিন দেয় তাদের আরও ভালো করার পরামর্শ দেন। তিনি নারায়ন গঞ্জে একটি লবণ শিল্প এলাকা গড়ে তোলার আশ্বাস দেন।
মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে নারায়ন গঞ্জ লবণ মিল মালিক গ্রুপের সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা ক্রুড লবণের মান উন্নয়ন সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
উক্ত সভার সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক মানব দেহে আয়োডিনের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি , খাবার লবনে পরিমিত পরিমানে আয়োডিন মেশানোর আহ্বান করেন। সুস্থ ও মেধা বিকাশে অবশ্যই খাবার লবণে পরিমিত পরিমানে আয়োডিন মেশাতে হবে। যে সমস্ত লবণ ফ্যাক্টরি তাতে ব্যাথ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের কথা জানান। লবণের মান উন্নয়নের জন্য লবণ কারখানা গুলোতে প্রয়জিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথাও বলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চাদপুর জোনের লবণ মিল মালিকদের নিয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সল্ট সেল প্রধান সরোয়ার হোসেন। তার বক্তব্যে তিনি নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চাঁদপুর জোনের বিভিন্ন লবণ মিলের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৩ সালের আয়োডিন পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন। নিয়মিত ভাবে প্রতি ৬ মাস পর পর এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাকিব আল রাব্বি, সরোয়ার হোসেন- সল্ট সেল প্রধান, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল এর প্রোগ্রাম অফিসার ইঞ্জিনিয়ার আকিব আবরা্, বিসিক ঢাকার আঞ্চলিক পরিচালক ডক্টর মোঃ আলমগীর হোসেন, জাকির হোসেন-পরিচালক ( শিল্প উন্নয়ন ও সপ্রসারন)। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও চাদপুর বিসিকের, ও নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও লবণ মিল মালিক গন উপস্থিত ছিলেন।
সুস্থ ও বুদ্ধিদিপ্ত জাতি গঠন ও দেশ থেকে আয়োডিন ঘাটতি জনিত রোগ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সারা দেশের আট টি লবণ জোনেই নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় বিসিক এই আলোচনা সভার অয়োজন করে থাকে।
উল্লেখ্য, আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড, হাবাগোবা, বামনত্ব, অকাল গর্ভপাত, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্বসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ৯০ দশকের পূর্বে বাংলাদেশে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যাসমূহ প্রকট আকার ধারণ করেছিল। দেশের বেশকিছু স্থানে বিশেষকরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলতে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। সে সময় পথেঘাটে গলগণ্ড রোগী দেখা যেত।
এসকল সমস্যা থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে সরকার একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই ৯০ দশক হতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কোর্পোরেশন (বিসিক) আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা নিরসনকল্পে সর্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লবণ মিলের নিবন্ধন প্রদান, মিলসমূহকে পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, লবণমিল ও বাজার পর্যায়ে মনিটরিং এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। এ কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে ৭৬% পরিবার আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণ ব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্ব দেশ থেকে সমূলে নির্মূল হয়েছে। জাতীয় পুষ্টি জরিপ ১৯৯৩ অনুযায়ী ৮.৮% মানুষের মাঝে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং ০.৬% মানুষের মাঝে বামনত্ব ছিল। দীর্ঘ তিন দশকের পরিশ্রমের ফলে দেশ দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে। দেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ উতপাদন কার্যক্রম শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার ছিল ৬৮.৯০%। বিসিকের এ কার্যক্রমের ফলে ২০১৯-২০পর্যন্ত আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার কমে দাড়িয়েছে ২৪.৬% ।