রূপগঞ্জে স্টিল মিলে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইব্রাহিম হাওলাদার (৩৫) নামে আরও এক দগ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার শরীরের ২৮ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এ নিয়ে এই ঘটনায় সাতজনই মারা গেল।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রূপগঞ্জ থেকে দগ্ধ অবস্থায় সাতজনকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল।
আজ সকাল ইব্রাহিম হাওলাদার নামে আরো এক যুবক মারা গেছেন। তিনি বরিশালের এয়ারপোর্ট উপজেলার বারইখালী গ্রামের মৃত মোখলেস উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে ইব্রাহিম। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর রসুলপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন।
এরআগে ছয়জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- শংকর (৪০), ইলিয়াস আলী (৩৫), নিয়ন (২০) ও আলমগীর হোসেন (৩০), জুয়েল (৩৫). গোলাম রাব্বি (৩৫)।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, লাশ ঢামেক মর্গে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৪ টার দিকে উপজেলার গাউছিয়া সাউঘাট এলাকার রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড (আরআইসিএল) এর কারখানায় লোহা গলানোর ভাট্টিতে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে গলিত তরল লোহা শ্রমিকদের ওপর ছিটকে পড়লে গুরুতর দগ্ধ হন সাতজন।
এদের মধ্যে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান শংকর, রাত ১২টার দিকে মারা যান ইলিয়াস আলী, শুক্রবার (৫ মে) সকাল সোয়া ১০টার দিকে মারা যান নিয়ন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আলমগীর হোসেন ও রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান রাব্বি। শুনিবার (৬ মে) মারা যান জুয়েল।
এদিকে রহিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড (আরআইসিএল) কারখানায় বিস্ফোরণে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মিলের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
শুক্রবার (৫ মে) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হকের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা কারখানাটি পরিদর্শন করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে কারখানাটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এছাড়া এ ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এরআগে আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শহীদ আলম বলেন, বিকেল তিনটায় ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসকে তারা অনেক পরে জানায়। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে অগ্নি নির্বাপক কোন যন্ত্র দেখা যায়নি।
এছাড়া শ্রমিকরা যে ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করার কথা সেগুলো তারা ব্যবহার করেনি বলেও মিলস সূত্রে জানতে পেরেছি। কারখানাটির ছাড়পত্র নেই।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষে কারখানাটি ছাড়পত্রের জন্য অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে আবেদন করে। তারপর কারখানা পরিদর্শক খালিদ হাসান ও মেহেদী হাসান দুই দফায় কারখানাটি পরিদর্শন করেন।
কারখানার শ্রেণি ও কাজের ধরন অনুযায়ী, শ্রমিকদের ‘যথাযথ’ নিরাপত্তা না থাকায় তাঁরা কারখানাটিকে ছাড়পত্র না দিয়ে নিরাপত্তা জোরদারের সুপারিশ করেন।