সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

রূপগঞ্জে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিষাক্ত ব্যাটারী কারখানা. ভোগান্তি

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩, ৪.০৯ এএম
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিশ্বরোড এলাকায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় জিইউজো নামে একটি ব্যাটারী কারখানার বিরুদ্ধে বিষাক্ত সীসা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। জনবসতিপূর্ন এলাকায় বিষাক্ত সীসায় তৈরী ব্যাটারী কারখানার অনুমোদন দেওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপর ক্ষোভে ফুসছেন এলাকাবাসী। বিষাক্ত সীসায় পরিবেশ দূষণের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিশ^রোড জিইউজো ইন্ডাসট্রিয়াল লিমিটেড নামের ব্যাটারী কারখানাটি অবস্থিত। কারখানটির মালিক একজন চায়নিজ নাগরিকের মালিকানাধীন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে চাইনিজ নাগরিকের নাম গোপণ করেন। তবে কারখানাটির ব্যবস্থাপক এনামুল নামে একজন। বিশ^রোড এলাকায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। এছাড়া জিইউজো ব্যাটারী কারখানাটির পাশে এখলাস উদ্দিন ভুইয়া স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখপড়া করে। কারখানাটির আশেপাশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে। কারখানাটিতে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। এ ব্যাটারী কারখানাতে ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ট্রাক, বাস ও মোটরসাইকেলের ব্যাটারী তৈরী করে। এ কারখানাটি ব্যাটারী তৈরীকে ক্ষতিকারক সীসা ব্যবহার করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারী কারখানা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু কারখানা মালিকপক্ষ সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারী কারখানা স্থাপন করেন। এর আগে ২০২১ সালের ১২ জুলাই ক্ষতিকর সীসা ব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূত ব্যাটারী তৈরী করায় জিইউজো ইন্ডাসট্রিয়াল লিমিটেড কারখানা জরিমানা করে র‌্যাব-১১। জরিমানা করে তাদেরকে সতর্ক করলেও তারা না সুধরিয়ে বিষাক্ত সীসা দিয়ে ব্যাটারী তৈরী অব্যাহত করেছে জিইউজো ইন্ডাসট্রিয়াল লিমিটেড কারখানাটি। কারখানাটির বিষাক্ত কালো ধোয়ার কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। এছাড়া ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরির ফলে ফসলি জমিসহ বিভিন্ন গাছের মুকুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে। আবার ফল ধরলেও তা বড় হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এলাকায় গাছের ফলও কম ধরছে এবং কোন গাছে ফল দেখাই যায় না। আবার ফল ধরলেও তা ঝরে পড়ছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে আইনের তোয়াক্কা না করে অনুমোদনহীন কারখানায় বিষাক্ত সীসায় তৈরি হচ্ছে জিইউজো ব্যাটারী কারখানার ব্যাটারী। পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সীসা তৈরি হয় পরে সেই সীসা দিয়ে পূনরায় ব্যাটারী তৈরী করে তারা। ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকায় লোকজনের দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের অজানা রোগ। ছোট বড় সকলের দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট। স্থানীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করা কারখানা চালানো কারণে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো হামলা মামলার শিকার হতে হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই কারখানার চারপাশের বাড়ি টিনের তৈরি। সীসা তৈরির কারণে টিনগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। বিষাক্ত সীসা ব্যবহার করে ব্যাটারি তৈরি করার ফলে যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তার ফলে ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমির ফসল। ছড়াচ্ছে নানা রোগবালাই। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শ্রমিকরা কোন ধরণের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া কাজ করে। ক্যামিকেল দাহ্য পদার্থ দিয়ে কাজ করতে হলে হাতে মুখে মাস্ক গ্লাবস পড়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কোন প্রকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম না দিয়েই কাজ করাচ্ছে। এতে শ্রমিকরা শ^াসকষ্টসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এই কারখানায় সারাদিন ও রাতে সীসা দিয়ে ব্যাটারী তৈরী হয়। এসময় হাঁচি-কাশি লেগেই থাকে। কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগই কারখানার আশেপাশেই থাকেন। শ্রমিকদের পাশাপাশি তাদের ছেলে মেয়েদের শ^াসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানায় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাব দেখিয়ে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার সাথে ব্যাটারি কারখানা থাকায় ব্যাটারী থাকায় দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সালাম বলেন, ব্যাটারী কারখানার কারণে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারিনা। ব্যাটারীর সীসার গন্ধে সাধারণ মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারেনা। কারখানার চুল্লী দিয়ে দিনে ৩-৪ বার কালো ধোয়া ছাড়া হয়। এসময় ধোয়ার কারণে চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। দূর থেকে দেখে মনে হবে কুয়াশাচ্ছান্ন এলাকা। আর এ কারণে এলাকাটিতে সারাবছর যেন শীতকালের মতো কুয়াচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

 

রুবেল নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ভাই আর বইলেন না ব্যাটারী কারখানার ধোয়ার যন্ত্রনায় আর পারতাছিনা। কারখানার মালিক চায়না বইলা হুনছি। এ ব্যাটারী কারখানার লাইগা আমাগো বাড়ির গাছপালা সব মইরা গেছে। আমার ছোড পোলাডার শ্বাসকষ্ট অইয়া গেছে। আমরা এলাকার মানুষও হেগো কিছু কইতে পারি না। কিছু কইতে গেলে গুন্ডা বাহিনী দিয়া আমাগো উপরে হামলা চালায়।

কথা হয় বৃদ্ধা জাহেদা খাতুনের সাথে তিনি বলেন, কারখানার ধোঁয়ার গন্ধে বাবা বাড়িত থাকতে পারিনা। নাকে মুখে কাপড় দিয়া ধোয়ার গ্যাসের গন্ধ যায়না। আমাগো দেহার কেউ নাই। এসময় বৃদ্ধা জাহেদা খাতুন এ ব্যাটারী কারখানা বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ ব্যাপারে কারখানাটির ব্যবস্থাপক এনামুলের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আইভী ফেরদৌস বলেন, বিষাক্ত সীসার ধোঁয়া মানবদেহে প্রবেশ করলে মাথাব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যান্সার, ব্রেনে সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিল রোগ মানবদেহে হতে পারে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফয়সাল হক বলেন, এ ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নেই। যেহেতু জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, জিইউজো ব্যাটারী কারখানাটির অনুমোদন থাকলেও তাদের কারখানাটি দূষণ করার কারণে তাদেরকে নোটিশ করার হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাদের নোটিসের শুনানী করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort