রাত পোহালেই মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ত্যাগের উৎসব। দিনটিতে মুসলমানরা ঈদগাহে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের পর স্ব-স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কুরবানি করেন। আর কুরবানির মাংস আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মাঝে বণ্টন করেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলিম ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার ঈদ উদযাপনের আবহ আগেই শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের মানুষের আনন্দ একটু বেশিই। কারণ পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার রাজধানী ও এর আশপাশে কর্মরতদের বাড়ি যেতে আগের মতো ভোগান্তি নেই। তবে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে এবারের ঈদ অনেকটা নিরানন্দের মধ্য দিয়েই উদযাপিত হবে। কারণ ভয়াবহ বন্যায় এসব এলাকার মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের ঘর, গোলার ধান বানের পানিতে ভেসে গেছে।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাস আবার চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। তাই ঈদ কেন্দ্র করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা ও ঈদ জামাত আদায়ে ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ সাধ্য অনুযায়ী কুরবানির পশু কিনেছেন। কেউ কেউ আজ কিনবেন। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে যাওয়ার যাত্রা সপ্তাহখানেক আগে শুরু হয়েছে।
সকালে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। নামাজের পর খুতবায় ইমাম সাহেব কুরবানির মর্মবাণী তুলে ধরবেন। পশু কুরবানির মাধ্যমে মনের পশুকে দমিত করার আহ্বান থাকে খুতবায়। দোয়ার মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের প্রথম পর্ব শেষ হবে। এরপর পশু কুরবানির মাধ্যমে শুরু হবে ঈদের দ্বিতীয় পর্বের উদযাপন। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় বিকাল পর্যন্ত আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে কুরবানির পশুর মাংস বণ্টনের আনন্দে মেতে উঠবেন অনেকে।
ঈদুল ফিতরের পর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্রকে কুরবানি করতে চেয়েছিলেন। ইব্রাহিম (আ.)-এর নিয়ত ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগে খুশি হয়ে তার পুত্রের বদলে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার ইশারায় দুম্বা কুরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অসামান্য এই ত্যাগের মহিমা জাগ্রত রাখতে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় পবিত্র জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কুরবানি করেন। ঈদুল আজহার পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কুরবানি দেওয়ার সুযোগ থাকে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল আটটায়। এখানে একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল সাতটা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মোট পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দেশের বড় বড় ঈদগাহ ময়দানের মধ্যে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ঈদ জামাত, কিশোরগঞ্জের শোয়ালাকিয়া ঈদ জামাতের মতো বড়-ছোট সব ধরনের প্রাঙ্গণে জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর রাস্তা-সড়ক দ্বীপে বাংলা এবং আরবিতে ঈদ মুবারক লেখা রংবেরঙের পতাকা ওড়াবে সিটি করপোরেশনগুলো। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে আলোকসজ্জা নিষিদ্ধের কারণে এবার রাতের বেলায় রাজধানীসহ জেলা-উপজেলার ভবনগুলোতে আলোর ঝলকানির দেখা মিলবে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধাক্কা এসেছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে বৃহস্পতিবার আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা : শুভেচ্ছা বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, কুরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ।
আর শুভেচ্ছা বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন- ‘প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।’
মির্জা ফখরুলের শুভেচ্ছা : ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি সবার সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।