পাকিস্তানি নারী স্ত্রীর দাবি নিয়ে চুনারুঘাটের যুবকের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জে দায়ের করা যৌতুকের মামলায় সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ওরফে হিরার (৩৭) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাহেলা পারভীন দীর্ঘ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
বাদী পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ফয়সল খান এবং বিবাদী পক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মীর সিরাজ, অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন।
এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর একই আদালতে হিরার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে লাহোর প্রদেশের মুলতান রোডের সাকি স্ট্রিট সৈয়দপুরের বাসিন্দা মাকছুদ আহমেদ ও শামীমা আক্তারের মেয়ে মাহা বাজোয়া নামে ওই পাকিস্তানি নারী বাদী হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় হবিগঞ্জ কোর্টে মামলাটি করেছিলেন।
আদালত ওইদিনই মামলার শুনানি শেষে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। তিনি পৌরসভার উত্তর বাজার বড়াইলের বাসিন্দা সফি উল্ল্যাহ মজুমদারের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন।
সাজ্জাদ জানান, জীবিকা নির্বাহের জন্য ২০০৮ সালে আরব আমিরাতে গাড়িচালক হিসেবে কাজে যোগ দেন। পরে কাজের সুবাদে ২০১৪ সালের শুরুতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পাকিস্তানে লাহোর প্রদেশের মাহা বাজোয়ার সঙ্গে। অবশেষে তাদের প্রেম বিয়েতে রূপ নেয়। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর তারা পাকিস্তানে গিয়ে ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী দুই লাখ দেনমোহরে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে স্ত্রী মাহা বাজোয়াকে বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে এসে বাংলাদেশের রীতিনীতি অনুযায়ী এক লাখ টাকা ধার্য করে কাবিন রেজিস্ট্রি করেন। বিয়ের পর ২০ দিন অবস্থান করেন মাহা বাজোয়া। পরে নিজ দেশে চলে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুরোধ করেন সাজ্জাদ। এতে মাহা বাজোয়া অনীহা প্রকাশ করেন। পরে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে মাহা বাজোয়াকে পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং সাজ্জাদ হতাশা নিয়ে নিজ কর্মস্থল ফের দুবাই চলে যান। দীর্ঘ ৭ বছর মান-অভিমানেই চলছিল সাজ্জাদ ও মাহা বাজোয়ার দাম্পত্য জীবন। বাংলাদেশে এসে পাকিস্তান চলে যাওয়ার পর মাহার মনে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন সাজ্জাদ। পরে মাহার খোঁজে তিনি পাকিস্তানে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন মাহা বাজোয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিয়ের ৭ বছর পর সাজ্জাদ জানতে পারেন মাহার পাকিস্তানের পেশোয়ার রাজ্যে আরেকটি স্বামী ও সন্তান আছে। লাহোরে খোঁজ নিয়ে দেখেন সত্যিই পেশোয়ারে নাছির নামে এক ব্যক্তিকে ২০১২ সালে বিয়ে করেন মাহা বাজোয়া এবং জান্নাত নামে কন্যা আছে।
তিনি আরও জানান, প্রতারণা করে আগের স্বামী সন্তানের কথা গোপন রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে তাদের মধ্যে চলে পারিবারিক কলহ। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে স্ত্রী মাহা বাজোয়াকে ২০২২ সালের ২৩ মে তালাক দেন সাজ্জাদ।
জানা যায়, তালাকের খবর পেয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এসে এক আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর সাবেক স্বামীর বাড়ি চুনারুঘাটের বাড়াইলে আসেন মাহা। সেখানে সাজ্জাদকে না পেয়ে সাজ্জাদের ভাবির বাসায় অবস্থান করেন তিনি। পরে মাহা বাজোয়া চুনারুঘাটের ঠিকানা দেখিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরে গত ১৩ ডিসেম্বর আইনজীবীর পরামর্শে পারিবারিক আদালতে আরেকটি মামলা করেন তিনি। পরের দিন রাতে মারপিটের অভিযোগে চুনারুঘাট থানায় আরেকটি মামলা করেন মাহা।
মাহা বাজোয়ার দাবি এ তালাক আইনসম্মত নয় এবং তিনি তালাক সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাননি বলে জানিয়ে স্বামীর অধিকার আদায়ে মামলা দায়ের করেন।তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে স্বামীকে চাই।
সাজ্জাদ বলেন, পাকিস্তানি টাকায় ২ লাখ টাকার কাবিন এডিট করে ২০ লাখ বানিয়ে ওই পাকিস্তানি নারী আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করেন এবং আগের স্বামীর সন্তানকে আমার বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার ডকুমেন্টস রয়েছে। আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাহা বাজোয়া ২০২২ সালের জুলাই মাসে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারকে স্বামী দাবি করেন এবং স্পন্সরকারী হিসেবে বাংলাদেশ আসতে চান। এনিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। পরে থানার উপপরিদর্শক লিটন রায় সাজ্জাদের কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখেন, মাহা বাজোয়া সাজ্জাদের তালাকপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এ সংক্রান্ত ২০২২ সালের গত ১৪ জুলাই হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করলে ঘটনা প্রকাশ পায় এবং মাহা বাজোয়া তখন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেননি। এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি হিল্লোল রায় জানান, পাকিস্তানি নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।