কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরদিন বালমোরাল ক্যাসেলে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস। মঙ্গলবার রানি এলিজাবেথ আনুষ্ঠানিকভাবে লিজ ট্রাসকে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দা আর জ্বালানি সংকটের মাঝে লাখ লাখ মানুষ ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ যখন হুমকির মুখে তখন ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ লিজ ট্রাসকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন।
গত ছয় বছরের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্রিটেনের দায়িত্ব নিয়েছেন লিজ ট্রাস। সরকার গঠনের জন্য ৯৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ রানির অনুমতির প্রয়োজন হওয়ায় মঙ্গলবার রাজপরিবারের স্কটিশ বাড়ি বালমোরাল ক্যাসেলে উড়ে যান তিনি। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ট্রেজারির প্রথম লর্ড হিসাবে নিয়োগের সময় রানির হাতে চুম্বন করেন লিজ ট্রাস।
তিন বছরের টালমাটাল ক্ষমতার পর পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন লিজ ট্রাস। বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রানি এলিজাবেথ আজ লিজ ট্রাস এমপিকে শুভেচ্ছা এবং নতুন প্রশাসন গঠনের জন্য তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
‘লিজ ট্রাস রানির প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও ট্রেজারির প্রথম লর্ড হিসাবে নিয়োগের সময় তার হাতে চুম্বন করেন।’
দেশটির নতুন এই প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনে যুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো নেতার তুলনায় সবচেয়ে কঠিন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হবেন। কারণ দেশটিতে ইতোমধ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার দুই সংখ্যার ঘরে পৌঁছেছে, বেড়েছে জ্বালানির দাম। পাশাপাশি চলমান অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্য দীর্ঘায়িত এক মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। যদিও নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালের দিকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বালমোরাল ক্যাসেলে গিয়ে রানির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের কিছুক্ষণ পর কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নির্বাচিত নেতা লিজ ট্রাস বালমোরাল ক্যাসেলে হাজির হন। পরে রানি তাকে নতুন সরকার গঠনের জন্য অনুরোধ জানান।
রানি এলিজাবেথের ৭০ বছরের দীর্ঘ রাজত্বের এই সময়ে ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৭ বছর বয়সী লিজ ট্রাস দায়িত্ব নিলেন। অর্থাৎ রানির সিংহাসনে থাকাকালীন ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে ব্রিটেন।
এর আগে, সোমবার ভোটের ফলাফলে ৮১ হাজার ৩২৬টি ভোট পেয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হন লিজ ট্রাস। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক পান ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট। এছাড়া বাতিল হয়েছে ৬৫৪টি ভোট।
ফলে ৪২ বছর বয়সী সুনাকের চেয়ে ২০ হাজার ৯২৭টি ভোট বেশি পেয়ে যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হন লিজ ট্রাস। তার আগের দুই নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন টেরিজা মে ও মার্গারেট থ্যাচার। তারা দু’জনেই কনজারভেটিভ পার্টির ছিলেন।