ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে ১১ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে গাজার অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে এক-ষষ্ঠাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বেকারত্ব বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজায় আরও ৪০ জন ইসরাইলি হত্যার শিকার হয়েছেন। এতে উপত্যকায় হত্যার শিকার মানুষের সংখ্যা ৪১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে ফ্রান্সস টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক খবর অনুযায়ী, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে স্পেন গতকাল শুক্রবার মুসলিম ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মন্ত্রীদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেছে।
মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি : ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার অর্থনীতি ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত হয়েছে। এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) অত্যধিক চাপের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্রমহ্রাসমান আন্তর্জাতিক সহায়তা ও রাজস্ব এবং ইসরাইলের বাধার কারণে ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়ছে।
ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ ফিলিস্তিনি তহবিল আটকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার অভিযোগ, ইসরাইলে গত ৭ অক্টোবর হওয়া হামলায় পিএর সমর্থন আছে। এসব অভিযোগ অবশ্য পিএ অস্বীকার করে। এছাড়া ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত সশস্ত্র ও বেসামরিকদের পরিবারকে পিএর পক্ষ থেকে দেওয়া ‘শহিদি ভাতা’ থেকেও অর্থ কেটে রাখে ইসরাইল। আঙ্কটাড আরও জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে প্রায় ৩ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশে পৌঁছেছে।
আঙ্কটাডের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল পেদ্রো ম্যানুয়েল মরেনো। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের অর্থনীতির দ্রুত পতন হচ্ছে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক পতন রোধ, মানবিক সংকট নিরসন এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও উন্নতি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।’
আরও ৪০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা : আলজাজিরা বলছে, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজায় তাদের বর্বর আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে এবং আরও ৪০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১৮ জনকে হত্যার দায়ে ইসরাইল আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে। ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের ৬ সহায়তা কর্মীও রয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে বৈঠক : স্প্যানিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এগিয়ে নিতে স্পেন শুক্রবার মুসলিম ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মন্ত্রীদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেছে। বৈঠকটি গাজার জন্য আরব-ইসলামিক কন্টাক্ট গ্রুপের সদস্যদের একত্রিত করবে বলে জানানো হয়েছে। এরমধ্যে মিসর, কাতার, সৌদি আরব এবং তুরস্কের মতো দেশ থাকবে।