সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : (০৮ ই জানুয়ারি) গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা লাইমস, আরাফাত লাইমস, মেঘনা লাইমস ও জাজিরা লাইমস চুনা কারখানা গুলোর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর ভিত্তিতে অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা কাজী ফারুককে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া চুনা ভর্তি ৫টি ট্রাকের বিষয়ে জানালেও তিনি রহস্যজনক ভাবে ট্রাক গুলো আটক বা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। এ ভ্যাট ফাঁকির ট্রাক গুলো আটক না করার কারনে সরকার কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। ট্রাক গুলো ঢাকা লাইমস চুনা কারখানা থেকে বের হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টার সময় ট্রাক গুলো বের হয়। ভ্যাট ফাঁকির ট্রাক গুলো আটক না করার এলাকাবাসী হতবাক। কাস্টমস কর্মকর্তা কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান কর্তৃপক্ষের কাছে।
তারা বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমস অফিস থেকে মাত্র ১০০ গজ দুরত্ব চুনা কারখানা গুলো। আবাসিক এলাকায় কয়েক যুগ ধরে চুনা কারখানা চলছে। এসব চুনা কারখানার পরিবেশ ও ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেট দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। অবৈধ চুনা কারখানার মালিকরা সরকারের গ্যাস চুরি ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ী, গাড়ী সহ ইত্যাদি সম্পদ করেছেন উক্ত চুনা ব্যবসায়ীরা।
এলাকাবাসী আরও বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসকে মাসিক লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ দিয়ে চলছে চুনা কারখানার ভ্যাট ফাঁকির রমরমা ব্যবস্থা।
তারা এক সময় শ্রমিকের কাজ করতো। চুনা কারখানা দিয়ে আজ হাজার কোটি টাকার মালিক। চুনা কারখানার মালিকদের টাকা ও সম্পদের হিসার দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) নিলেই সব কিছু বের হয়ে আসবে।
নাম দেখানো মাত্র ভ্যাট দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে উক্ত চুনা কারখানাগুলো মালিকরা এমনটাই দাবি সূত্রের।
নাসিক ১ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ঢাকা লাইমসের মালিক নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড আওয়মীলীগের সভাপতি হাজী খোরশেদ আলম, আরাফাত লাইমসের মালিক হাজী হজরত আলী, জাজিরা লাইমসের মালিক নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতা হাজী আনোয়ার ইসলাম এবং নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মেঘলা লাইমসের মালিক ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হাই মেম্বার।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উক্ত চুনার কারখানা গুলো থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার চুনা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মন চুনার দাম ৫২০ টাকা। প্রতি ট্রাকে ৫০০ মন চুন ধরে। যার বাজার মূল্য ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এতে সরকার ভ্যাট পাওয়ার কথা ৩৯ হাজার টাকা। প্রতি ট্রাক চুনায় ভ্যাট ৩৯ হাজার টাকা আসলে ৩০ দিনে ৩০ ট্রাক চুনার গাড়ী থেকে ভ্যাট আসার কথা ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যক্তি বলেন, উক্ত চুনা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে করে লক্ষ লক্ষ টাকার চুনা বিক্রি করলেও সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের যোগসাজশে সঠিক ভাবে সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছে না চুনা মালিকরা। ভ্যাট ফাঁকির জন্য ভুয়া চালান দিয়ে এসব চুনা বিক্রি করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ কাস্টমসের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা কাজী ফারুককে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য দেওয়ার পরেও কেন ব্যবস্থা নিলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি অফিসে নেই। আগামীকাল অভিযান করবো বলে জানান। অথচ চুনা কারখানা গুলো বর্তমান কাস্টমস অফিসের জানালা দিয়েই দেখা যায়।
প্রতিটি চুনা কারখানা থেকে মালিকরা আমাদের প্রতি মাসে আনুমানিক ৯০ থেকে ১ লক্ষ টাকা ভ্যাট দিচ্ছে বলে জানায় কাস্টমস কর্মকর্তা কাজী ফারুক।
ঢাকা কাস্টমস কমিশনার (পূর্ব) এর এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, উক্ত বিষয়টি কমিশনার স্যারকে জানানো হবে। যদি কাস্টমস কর্মকর্তার কোন ধরেনর গাফিলতি পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উক্ত বিষয়ে জানতে আরাফাত লাইমসের মালিক হজরত মিয়ার মুঠোফোনে কল দিলে তাকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি সাথে সাথে ফোন কেটে দেন। ঢাকা লাইমসের ম্যানেজার শফিক বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছু জানিনা বলে ফোন কেটে দেন।