ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের মাঝপথে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দুই ধাপে ইউপিতে সহিংস ভোটের পর এ বৈঠকের আয়োজন করল ইসি। আগামীকাল নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এই বিশেষ সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মহাপরিচালকদের অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সহস্রাধিক ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পিছিয়ে গেছে। পঞ্চম ধাপের নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ভোট পিছিয়ে জানুয়ারিতে নেওয়া যাচ্ছে। সোমবার কমিশন সভায় এ ধাপের ভোটের তফশিল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে। আগামী শনিবার অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ ও কয়েকটি পৌরসভার তফশিল ঘোষণা হতে পারে।
গত ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপের ৩৬৪টি এবং ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপের ভোটের দিন তিনজন করে মোট ছয়জন মারা যান। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের দিন মারা গেছেন সাতজন। আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে এক হাজার তিন এবং চতুর্থ ধাপে ২৩ ডিসেম্বর ৮৪০টি নির্বাচন হবে। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বৈঠক আয়োজন করল ইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম যুগান্তরকে বলেন, ভোটে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটছে। সেগুলো নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনাও দিয়েছি। তবুও বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার খবর গণমাধ্যমে আসছে। তাই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামনে কমিশনের বৈঠক আছে। দেখি ওই বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা ওঠে কিনা। তবে আমরা নির্বাচনটি করে যেতে চাই।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট করে সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র হন। ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি করপোরেশনের প্রথম সভা হয়। এ হিসাবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হবে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের। এ সিটিতে নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে সম্মতিও দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
ভোটের মাঝপথে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক : দুই ধাপে ১১৯৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ বৈঠক করতে যাচ্ছে ইসি। বৈঠক সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, তৃতীয় ও পরবর্তী ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং ১২টি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভোটের মাঝপথে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকটি ব্যতিক্রম। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে প্রত্যেকবারই বড় আকারে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকের আয়োজন করেছে ইসি। ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের আগেও এ ধরনের বৈঠক করেছিল তৎকালীন কমিশন। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা অংশ নিতেন।
ওই বৈঠকে ইসি নির্বাচনের পরিবেশ ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা বলেন, এবার সে ধরনের বৈঠকের আয়োজন করেনি বর্তমান কমিশন। নির্বাচনে সহিংসতায় মানুষের মৃত্যু হলেও করোনার অজুহাতে শুরু থেকেই অনেকটা নির্লিপ্ত ছিল। সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করে ইসি। কিন্তু ওই বৈঠকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের রাখা হয়নি। এবার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করলেও সেখানে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডাকা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, তৃতীয় ধাপে এক হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন রয়েছে। চতুর্থ ধাপেও আট শতাধিক ইউপিতে ভোট হবে। যেহেতু সামনে বড় আকারের নির্বাচন এবং মাঠ পর্যায়ে সহিংস ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তাই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক ডাকা হয়েছে। নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালন এবং সহিংস ঘটনার আগেই যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকেন-সেই নির্দেশনা ইসির পক্ষ থেকে দেওয়া হতে পারে।