পদ্মা সেতু চালুর পরপর পটুয়াখালী-ঢাকা নৌ-রুটের লঞ্চ যাত্রী কমতে শুরু করেছে। ভাড়া কমানোর হাঁকডাক দিয়ে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী মিলছে না লঞ্চগুলোতে। ফলে পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অপ্রতুল যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় আগামী দিনে লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
বিগত দিনের টানা রোটেশন পদ্ধতি ও স্টাফদের জুলুমবাজীর কারণে লঞ্চ রুটে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে ধারণা করেন অনেকেই। লঞ্চে জুলুমের শিকার যাত্রী সাধারণও বিগত দিনের স্বেচ্ছাচারীতার ঘটনাগুলো ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তবে এ সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে আগের মতই যাত্রী পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
বুধবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চ টার্মিনালে সুন্দরবন-৯ ও কুয়াকাটা-১ যাত্রীর অপেক্ষায় নোঙর করা আছে। তিল ধারণের ঠাঁই না পাওয়া লঞ্চ টার্মিনালে চলছে সুনসান নিরবতা। লঞ্চ কেন্দ্রীক টার্মিনালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝেও নেই আগের মত মহাব্যস্ততা। দুই-এক যাত্রী নিয়ে চলছে লঞ্চ স্টাফগুলোর টানাটানি। দ্রুত গতিতে মাত্র ৩শ টাকা ভাড়ায় ঢাকা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাঁকডাক করছেন তারা।
তিন তলা বিশিষ্ট সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের পটুয়াখালী ঘাটের কেবিন ইনচার্জ মো. জাফর মিয়া বলেন, লঞ্চে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য সিঙ্গেল, ডাবল, ফ্যামিলি ও ভিআইপিসহ মোট কেবিনের সংখ্যা ১২৯টি। এর মধ্যে ২৮ জুন পটুয়াখালী থেকে ৯২টি কেবিন বুকিং হয়েছে। চারশ টাকা ডেকের ভাড়া ৩শ টাকা করেছি। এছাড়া ২৮ টাকার ডাবল কেবিন ২২শ টাকা ও ১৫শ টাকার সিঙ্গেল ১২শ টাকা এবং ৭ হাজার টাকার ভিআইপি কেবিন ৫ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ যাত্রী আসছে। তবে পদ্মা সেতুর উচ্ছ্বাসে মাতা মানুষগুলো কিছুদিন পরে লঞ্চ ধরেই ঢাকা যাবে। কারণ এ অঞ্চলের মানুষ আরামদায়ক ভ্রমণে অভ্যস্ত।
সুন্দরবন লঞ্চের ইনচার্জ মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ২৭ জুন ঢাকা থেকে প্রায় একশ কেবিনে যাত্রী নিয়ে আসছি। এছাড়া সদরঘাট ও ফতুল্লা ঘাট থেকে ডেকে আড়াইশ ছিল। তবে এসব সংকীর্ণতা বেশি দিন থাকবে না। ভাড়াও নাগালে আনা হয়েছে। তাছাড়া শিশু সন্তান, বৃদ্ধ ও পরিবার নিয়ে নির্বিঘ্নে ভ্রমণের জন্য লঞ্চের কোনো বিকল্প নাই। মানুষের মাঝে পদ্মা সেতু নিয়ে যে আবেগ কাজ করছে, তার প্রভাব পড়ছে লঞ্চগুলোতে। তাই কিছু দিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রিন্স আওলাদ-৭ লঞ্চের পটুয়াখালী ঘাটের ইনচার্জ আ. আজিজ বলেন, ২৮ জুন সব মিলিয়ে ৪৫টি কেবিন বুকিং হয়েছে। ডেকে সর্বোচ্চ দুইশত যাত্রী উঠেছে। ৪শ টাকার ডেক ভাড়া ৩শ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার এবং ডাবল কেবিন দুই হাজার টাকা নামিয়ে আনা হয়েছে। আশা করি কুরবানির আগেই যাত্রী সংখ্যা আগের মত বেড়ে যাবে। ভ্রমণ ছাড়াও পণ্য ও সাংসারিক আসবাবপত্র পরিবহণের জন্য লঞ্চই একমাত্র বাহন।
এদিকে একাধিক লঞ্চ যাত্রীরা বলেন, বিগত দিনের যাত্রীদের জিম্মি করে শোষণে বিষক্রিয়ার ফল ভোগ করছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ডেকে চাদর বিছিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। কেবিন বুকিং করতে ভাড়া ব্যতিত অতিরিক্ত টাকা নিতো। অতিরিক্ত পণ্য বহনে টাকা নিতো। এছাড়া লঞ্চ টার্মিনালে শ্রমিকদের লাগাহীন অর্থ জুলুম ও লাঞ্ছিতের ঘটনা মনে পড়লে বিনা ভাড়া লঞ্চে যেতে ইচ্ছা জাগে না।
পটুয়াখালী চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পটুয়াখালী-ঢাকা রুটে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। মূলত পদ্মা সেতু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে আবেগ-আকাঙ্খা ছিল, তার প্রতিফলনে কিছুদিন যাত্রী কম হওয়ার সম্ভবনা আছে। তবে এসব প্রতিকুলতা কাটাতে লঞ্চ মালিকদের ও স্টাফদের যাত্রীদের প্রতি সহনশীল হতে হবে। বিগত দিনের লঞ্চ ভোগান্তির কারণে যাত্রীদের মাঝে যে ক্ষোভ আছে, তা সেবার মাধ্যমে ভুলিয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরুর অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে মালিকপক্ষকে।