একদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অন্যদিকে ভয়াবহ যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ৫মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লেগেছে এক ঘন্টারও বেশি। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে রোগী ও তার স্বজনরা। যানজটে আটকরা পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দিনভর এমন চিত্র ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া ও বঙ্গবন্ধু সড়কে। যা রাত পর্যন্ত চলমান থাকে। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। রীতিমত যানজট যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর। দিনে যেমন তেমন রাতেও রক্ষা পাচ্ছে না তারা। শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে দিনে ও রাতে পাল্লা দিয়ে যানজট লেগে থাকছে। গত কয়েকদিন ধরে এমন চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নগরবাসী। তাছাড়া সন্ধার আগে পরে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে রোগী সাধারণ। কারণ সন্ধার পর রোগী নিয়ে স্বজনরা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ছুটাছুটি করে। ডাক্তাররা সাধারণত বিকাল থেকে রাত ১০টা/১১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। তখন রোগীদের যাতায়াত বেড়ে যায় সড়কে। এছাড়া সারাদিন অকøান্ত পরিশ্রম শেষে অফিস গামী মানুষ বাসায় ফিরতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়ে র্দুভোগের শিকার হচ্ছেন। রোগী নিয়ে এ্যামবুলেন্সের সাইরেন বাজতেই থাকে, কিন্তু কেউ শোনে এই সাইরেন। আবার শুনলেও কিছু করার থাকে না । কারণ যেভাবে যানজট লেগে থাকে এ্যামবুলেন্স যাবে কিভাবে?
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মধ্যে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সন্ধ্যার পরও এই যানজট স্থায়ী হয়। সরেজমিনে সন্ধ্যার দেখা যায় চাষাড়া গোল চত্তর থেকে কখনো গলাচিপা, কখনো কালিরবাজার ব্যাংকের মোড়, কখনো উকিলপাড়া পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় চাষাড়া গোল চত্তর থেকে গলাচিপা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কে যানজট দেখা গেছে। নিত্যদিনের এমন চিত্র দৃশ্যমান হলেও সংশ্লিষ্টদের যেন কিছুই করার নেই। শুধু একে উপরের উপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ান তারা। যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের ভুমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
অপরদিকে ট্রাফিক বিভাগও যানজট নিরসনে কার্যকরী কিছু করতে পারছে না। বরং মাসোহারা আদায়ে তারা বেশি ব্যস্ত বলে অভিযোগ নগরবাসীর। তাদের যোগসাজসে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড যানজট সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখছে। চাষাড়া গোলচত্তর ব্যস্ততম পয়েন্ট হওয়ার পরও খাজা মার্কেটের সামনে অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ড, সুগন্ধার সামনে ইজিবাইক স্ট্যান্ড, জিয়া হলের সামনে রিকসা স্ট্যান্ড, শহীদ মিনার ঘেষে দুই দিকে সিএনজি স্ট্যান্ড, সমবায় মার্কেটের সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড, কেন? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও সংশ্লিষ্টরা নিশ্চুপ।
ডিআইটি এলাকার কাপড় ব্যবসায়ি আবুল কাউছার অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই বলেন, বিকালে সাড়ে ৫টার দিকে একটা জরুরী কাজে চাষাড়া যাওয়ার জন্য রিকসায় উঠেছি। কালিরবাজার ব্যাংকের মোড়ে এসে যানজটে আটকা পড়লাম। অনেকক্ষন বসে থাকার পর বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে বৃষ্টিতে ভিজে চাষাড়ায় আসলাম। এভাবে কি শহরে চলা যায়? প্রতিদিনের এই যানজট থেকে কবে রেহাই পাবো, জানি না।
বৃষ্টিতে ভিজে একাকার রিকসাচালক আব্দুল করিমের সাথে কথা হয়। ঠান্ডায় জমে গেছেন। বলেন, গত ১০ দিন আগেও ৫ থেকে ৬শত টাকা খ্যাপ মারতাম। গত কয়েকদিন ধরে জ্যামের কারণে ৩/৪শত টাকা আয় করতে পারি না। আর আজকে (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মাত্র ২শত টাকা পেয়েছি। অনেক সময় জ্যামে আটকা পড়ে পেসেঞ্জার নেমে যায় কম ভাড়া দিয়ে। পেসেঞ্জার পায়ে হেটে যেতে পারলেও আর খালি রিকসা নিয়ে জ্যামে আটকা পড়ে থাকি দীর্ঘ সময়।
পথচারী জামিল হোসেন বলেন, একদিকে বৃষ্টি আরেকদিকে ভয়াবহ যানজট, আমরা শেষ। ভিজে ভিজে বাসায় যাচ্ছি। জ্যাম না থাকলে রিকসায় যেতে পারতাম।
এদিকে ভোক্তভোগীরা বলছেন, কেউ বলে যানজট নিরসন ট্রাফিক বিভাগের কাজ, কেউ বলে সিটি করপোরেশনের কাজ, কিন্তু আমরা মনে করি, এসব বাদ দিয়ে সম্মেলিতভাবে এর সমাধান করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি হওয়া যানজটের স্থায়ী সমাধনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকেই উদ্যোগ নিতে হবে।