ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বালু বোঝাই ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ৭০ যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা ২১ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইস্কা বিলে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
এর মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম (৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭) ও ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) ও তার মেয়ে মুন্নি (১০), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৫ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যেকের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর যে কয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ট্রলারের চালক জামির, তার দুই সহকারী খোকন ও রাসেলকে আটক করেছে পুলিশ।
ট্রলারের যাত্রী সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আঁখি আক্তার সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও তার স্বামী, দুই ছেলে, শাশুড়ি, ভাসুরের তিন ছেলেসহ বিজয়নগরের চম্পকনগর ঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দ বাজারের উদ্দেশে ট্রলার নৌকায় ওঠেন। লইস্কা বিলে পৌঁছলে বালু বোঝাই একটি ট্রলার তাদের ট্রলারকে ধাক্কা দেয়।
এতে তাদের ট্রলার পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় তিনি স্বামী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে সাঁতরে বিলের কিনারে আসতে পারলেও আরেক ছেলে, শাশুড়ি ও ভাসুরের তিন ছেলে আসতে পারেনি।
আরেক যাত্রী মোহাম্মদ রাফি বলেন, আমি ট্রলার নৌকার ছাদে বসে ছিলাম। ধাক্কায় আমাদের ট্রলার ডুবে যেতে দেখে পানিতে ঝাঁপ দেই। এরপর সাঁতরে উপরে উঠি।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে প্রধান করে গঠন করা কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।