বিরল ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্ষে বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগীদের অধিকাংশই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের।
জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক আরও জানান, বর্তমানে আক্রান্ত এই রোগীদের ৯৮ শতাংশই আফ্রিকার বাইরের বিভিন্ন দেশের এবং আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই পুরুষ সমকামী।
অর্থাৎ, পুরুষদের মধ্যে সমলিঙ্গের যৌনতার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগটি। তবে এই রোগে আক্রান্ত যৌনসঙ্গী যদি বিপরীত লিঙ্গের হয়— সেক্ষেত্রেও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।
চলতি সপ্তাহের শনিবার বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্স বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে যৌনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়া ও নতুন যৌনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তার মেডিকেল রেকর্ড সম্পর্কে জেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা (যৌনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে) আর একটু সংযমী ও সচেতন হই, সেক্ষেত্রে এই রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব। এই রোগ থেকে আত্মরক্ষা অনেকটাই নির্ভর করছে নিজের ওপর।’
গত দুই মাসে মাঙ্কিপক্সে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের প্রায় ১০ শতাংশকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এবং ইতোমধ্যে এই রোগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান গেব্রিয়েসুস।
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আদ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার।তার পর একসময় মানবদেহেও সংক্রমিত হওয়া শুরু করে রোগটি।
মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণীর একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দু’টি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে— মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।
রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলা।
সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের মতো মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। গণ সংক্রমণের ঝুঁকিও খুব কম। এতদিন কেবল মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকাতেই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলত।
এ কারণে এই ভাইরাসটি করোনা মহামারির মতো দুর্যোগ বয়ে আনবে না বলেই ধারণা করছেন সংক্রামক রোগ ও জীবাণু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা, তবে ডব্লিউএইচও এখনও এতটা নিশ্চিত হতে পারছে না।