অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গেছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বমঞ্চে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় টাইগাররা। টানা দুই প্রস্তুতি ম্যাচ হারের পর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে হারে তারা। এতে গেল-গেল রব ওঠে চারদিকে। প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কাও জাগে। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে রেকর্ড জয়ের মাধ্যমেই পরের পর্বে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার পাপুয়া নিউ গিনির (পিএনজি) বিপক্ষে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৮১ রানের বড় পুঁজি পায় বাংলাদেশ। সমীকরণ অনুযায়ী ৩ রানের ব্যবধানে জিতলেই নিশ্চিত হতো সুপার টুয়েলভ। তবে দুই দলের ব্যবধান মাঠেই স্পষ্ট করলেন টাইগার ক্রিকেটাররা। পিএনজিকে ৯৭ রানে অলআউট করে ৮৪ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে বেশি রানে জয় ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, ৭১ রানে, ২০১২ সালে।
৩ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘বি’ থেকে সবার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টিকিট নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভের লড়াইয়ে অবশ্য কোন গ্রুপে পড়বে বাংলাদেশ সেটি চূড়ান্ত হয়নি এখনো। দিনের অপর ম্যাচে রাত ৮টায় মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ওমান ও স্কটল্যান্ড। এ ম্যাচের ফলের উপর নির্ভর করবে ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ দলের সঙ্গী হচ্ছে কে, আর সুপার টুয়েলভের কোন গ্রুপে যাচ্ছে টাইগাররা।
তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে বৃহস্পতিবার নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেয় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে অনবদ্য পারফরম্যান্স মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, সাইফউদ্দিনদের; বোলাররাও দেখালেন দাপট।
টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ওমানের বিপক্ষে একাদশে ফিরেই অর্ধশতকের স্বাদ পাওয়া নাঈম শেখ এ ম্যাচে রানের খাতা খুলতে পারেননি। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লিটন আর সাকিব। গড়েন ৫০ রানের পার্টনারশিপ। ইনিংসের অষ্টম ওভারে পিএনজির অধিনায়ক আসাদ ভালার প্রথম বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ফেরেন ২৩ বলে ২৯ রান করে।
এরপর নামেন মুশফিকুর রহিম। এ ম্যাচেও ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারেননি তিনি। সাইমন আতাইকে উইকেট দিয়ে বিদায় নেন ৫ রান করে। একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের গতি সচল রাখেন সাকিব। ছুটছিলেন ফিফটির দিকে। কিন্তু আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও আক্ষেপ সঙ্গী তার। আসাদ ভালাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে চার্লস আমিনির হাতে ধরা পড়েন। ৩ ছয়ে ৩৭ বলে ৪৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর ব্যাট হাতে নেমে যেন জমানো খেদ মেটাতে চাইলেন মাহমুদউল্লাহ। শুরু করেন মারমুখি ব্যাটিং। মাত্র ২৭ বলে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নেন তিনি। হাঁকান সমান ৩টি করে চার ও ছক্কা। ২৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে অবশ্য আউট হয়ে যান অধিনায়ক।
শেষদিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ব্যাটে ৬ বলে অপরাজিত ১৯ রানের সঙ্গে আফিফ হোসেনের ১৪ বলে ২১ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান তোলে বাংলাদেশ।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই নড়বড়ে দেখা যায় পিএনজিকে। ধসের শুরুটা হয় সাইফউদ্দিনের হাত ধরে। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে এই অলরাউন্ডার ফেরান লেগা সিয়াকাকে (৫)। এরপর পিএনজি অধিনায়ক আসাদ ভালার (৬) উইকেট তুলে নেন তাসকিন। তবে এতে তাসকিনের যতটা না অবদান, তার চেয়ে ঢের বেশি সোহানের। চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচ নেন এই উইকেটরক্ষক।
পরের ওভারে দৃশ্যপটে সাকিব। জোড়া আঘাতে বিদায় করেন চার্লস আমিনি (১) ও সেসে বাউকে (৭)। পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ১৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে পাপুয়া নিউ গিনি। সাকিব নিজের তৃতীয় শিকার বানান সিমন আতাইকে (০)।
সতীর্থদের সফলতার ভিড়ে শেখ মেহেদী হাসান উদযাপনের উপলক্ষ পান নরম্যান ভানুয়াকে (০) তুলে নিয়ে। এতে ২৪ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়ে পাপুয়া নিউ গিনি। সাকিবের চতুর্থ শিকার হন হিরি হিরি। নিজের কোটার ৪ ওভার শেষে মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন টাইগার অলরাউন্ডার।
অষ্টম উইকেট জুটিতে লড়াইয়ের চেষ্টা চালান কিপলিন ডোরিগা আর চাদ সোপার। দুজনের ২৫ রানের একটি পার্টনারশিপ হয়। এরপর ১১ রান করা সোপানকে ফিরিয়ে পার্টনারশিপ ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ডোরিগা অবশ্য থাকেন শেষ পযর্ন্ত। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন তিনি। আর কোনো ব্যাটসম্যান প্রতিরোধ গড়তে না পারায় ৯৭ রানে গুটিয়ে যায় তারা।
এতে ৮৪ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে সাকিব আল হাসান সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নেন ২ উইকেট।