নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় খাবার পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ময়লা পানি বাধ্য হয়ে গিলতে হচ্ছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের। ফলে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সংকট চলে আসছে। বাধ্য হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী পানি বাসা বাড়িতে ব্যবহার করার কারনে পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিয়মিত বিল পরিশোধ করার পরও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না তারা। অপরদিকে দীর্ঘ দিন ধরে সরবরাহ হওয়া ময়লা পানি নিয়ে একের পর এক অভিযোগ তোলা হলেও এর কোন সুরাহ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড ও আশে^ পাশে^র বেশ কয়েকটি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরশন থেকে সরবরাহ করা পানি ময়লা আবর্জনা এবং কালো কুচকুচে নোংরা। গোদানাইল পাঠানটুলি আইলপাড়া এলাকায় অবস্থিত পানি পাম্পটিও দীর্ঘ দিনের । সংস্কার কিংবা পরিবর্তন না করার কারনে প্রতিনিয়ত ময়লা পানি পাচ্ছে মানুষ, ভুক্তভোগীদের এ অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।
সূত্র জানায়, সিটি কপোরেশনের গোদানাইল,আইলপাড়া,পাঠানটুলি, নিউ হাজীগঞ্জ, দক্ষিন এনায়েতনগর, গোপটা,শাহজালাল রোডসহ আশে^পাশে^র প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার করা পানি সরবরাহ করা হয় আইলপাড়া এলাকায় অবস্থিত পানি পাম্প থেকে। এখান থেকে সরবরাহ করা পানি এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। পানিতে ময়লা আবর্জনা আর নোংরা । এক বালতি পানি নেয়ার পর তাকিয়ে দেখলে মনে হচ্ছে কারো কুচকুচে নর্দমার পানির মতো । বাধ্য হয়েই নোংরা পানি ব্যবহার করে মানুষ।
এনায়েতনগর এলাকার বাসিন্দা নুর সোহলে বুধবার দুপুরে জানান, ওয়াসা থেকে দায়ত্বি নিয়ে এখন পানি সরবরাহ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। কিন্তুু এ পানি কোন ভাবেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানির রং দেখতে কালো কুচকুচে । মনে হয় কোন নর্দমার পানি আমারা পানি করছি। অনেকটা বাধ্যহয়েই মানুষ এসব নোংরা পানি পান করে থাকে।
আইল পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বুধবার জানান, সিটি কপোরেশনের সরবরাহ করা পানি কোন ভাবেই ব্যবহার যোগ্য না। ময়লা পানি আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্যবহার করছি। আগে পানি স্বচ্ছ ছিল । এখন কালো রংয়ের । দেখলেই মনে হয় নোংরা। এরকম ময়লা পানি দিয়ে ভাত রান্না করলে তার রংও কলো দেখা যায়।
তিনি আরো জানান, আইলপাড়ার পানির পাম্পটি দীর্ঘ দিনের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ এখনের সরবরাহ করা পানি ব্যবহার করে। সংস্কার করা হয়না পাম্পটি। এলাকার মানুষের অনেক প্রতিবাদেও কাজে আসেনি। নতুন আরেকটি পাম্প বসানোর দাবী ভুক্তভোগীদের।
নিউ হাজীগঞ্জের বাসিন্দা আরিফ হোসেন জানান, বিশুদ্ধ পানির সংকটে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে অনেক কষ্টে আছি। নামেই সিটি কর্পোরেশন । সেবা আমরা তেমন পাচ্ছিনা। পানিতে ময়লা আবর্জনায় । পানি ব্যবহার করাই দায়।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীতে পানি সরবরাহের দায়িত্বে ছিল ওয়াসা। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর পানি সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনকে।
সিটি কর্পোরেশন বলছে,নারায়ণগঞ্জ নগরীতে প্রায় ২০লক্ষাধিক মানুষের জন্য প্রতিদিন ১২ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। নগরবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে তারা সুপেয় পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। পানির জরুরী সংকট মোকবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে ১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ গভীর নলকূপ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। তার মধ্যে ৯টির কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জন্য ৫০ কোটি টাকার একিিট শোধনাগার প্রকল্পের প্র্স্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে দেয়া হয়েছে। গোদনাইলে নির্মানাধিন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে প্রতিদিন আড়াই কোট লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটির ৮ ওয়ার্ড ও আশে^ এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহ করা পানি ময়লা ও ব্যবহার অনুপযোগী এবিষয়ে জানতে চাইলে নাসিক ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা বুধবার দুপুরে জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশন ময়লা পানি সরবরাহ করার বিষয়টি সঠিক না। অনেকে চোরাই পথে পানির লাইন নেয়ার কারনে পানির লাইনে ময়লা আবর্জনা পাওয়া যেতে পারে।
তিনি অভিযোগ করেন, পানিতে ময়লা আসে চোরাইল লাইনের কারনে। অনেক চোরাই ভাবে ময়লা ড্রেন দিয়ে লাইন নিয়েছে। অনেকের লাইন লিকেজের কারনে ময়লা পানির লাইনে ঢুকছে। আর এসমস্যা বেশি হয় যখন পানি শেষ পর্যায়ে থাকে। লাইনে পানি ভরপুর থাকলে এমন সমস্যা হয় না। চোরাই পথে পানির লাইন ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান এ জনপ্রতিনিধি।